শিকাগোতে বেসবল খেলার মাঠে দর্শক সমাগম। কারও মুখে নেই মাস্ক। ছবি: রয়টার্স।
এক দিনে এক লক্ষেরও বেশি করোনা-আক্রান্ত। ছ’মাসে এই প্রথম এই সংখ্যক দৈনিক সংক্রমণে ফের শঙ্কিত আমেরিকা।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ স্পষ্ট। নতুন করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই। এর আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গেলে আর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। কিন্তু পরে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকেই পিছু হটেছে প্রশাসন। নতুন করে এই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টকে দায়ী করেছে সরকার। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের সাবধান-বার্তা, ডেল্টাতেই ভয়ের শেষ নয়।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, ডেল্টাতেই শেষ নয়। এর পরে আরও মিউটেশন ঘটিয়ে আরও ভয়ানক স্ট্রেন আসতে পারে। সবটাই নির্ভর করছে সংক্রমণের পরিমাণের উপর। যত বেশি ভাইরাস ছড়াবে, তত তার মধ্যে বদল ঘটবে। এর জন্য টিকাকরণ হয়ে গেলেও মাস্ক পরে যাওয়া জরুরি। এ বার একই কথা শোনা গেল আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচির মুখে। সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ডেল্টার পরে যদি দেশে আরও কোনও ভেরিয়েন্ট আসে, তা হলে কিন্তু ‘বড় বিপদ’ ডেকে আনবে।
আমেরিকায় এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লরিডা, টেক্সাস, মিসৌরি, আরকানসাস, লুইজ়িয়ানা, আলাবামা, মিসিসিপি। ফ্লরিডায় বাচ্চাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক বেড়েছে। গত সাত দিনে আমেরিকায় গড় দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৯৫ হাজার। বুধবার দৈনিক সংক্রমণ ১ লক্ষ ছাড়ায়।
ফাউচি এ দিন বলেন, দৈনিক সংক্রমণ ২ লক্ষও ছুঁতে পারে। সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এখনও ভ্যাকসিন পাননি, তাঁদের মনে হচ্ছে, তাঁরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন কিন্তু নয়। সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন।’’ ‘দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজ়িজ়েস’-এর প্রধান ফাউচি জানান, তাঁরা ঠিক করেছেন, যাঁরা দুর্বল, শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের বুস্টার শট দেওয়া হবে। জার্মানি, ফ্রান্স ও ইজ়রায়েল ইতিমধ্যেই বুস্টার ডোজ় দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ফাউচি বলেন, ‘‘ডেল্টার মতো কিংবা তার থেকেও বেশি সংক্রামক কোনও স্ট্রেন যদি আসে, তা হলে কিন্তু বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।’’
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এখনও পর্যন্ত করোনার যে ভেরিয়েন্টগুলি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কাজ দিচ্ছে ভ্যাকসিন। কিন্তু এমন আশঙ্কা-ও রয়েছে যে এর পরে কোনও নতুন স্ট্রেনের ক্ষেত্রে টিকা হয়তো কাজ দেবে না। কোনও কোভিড টিকা কত দিন কাজ দেবে, তা নিয়েও মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে। টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা মডার্নার দাবি, তাদের টিকার মেয়াদ থাকছে ছ’মাস।
ব্রিটেনে আচমকাই সংক্রমণ বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে। এ বারে হয়তো পুরোপুরি ‘স্বাধীন’ হবে সবাই, আশায় ব্রিটেনবাসী। কিন্তু সরকারের চিন্তা, অল্পবয়সিদের মধ্যে টিকার প্রতি অনীহা কাটছে না। তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে রীতিমতো ‘টোপ’ ফেলেছে সরকার। প্রশাসনের ফতোয়া— ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ় না-নিলে নাইটক্লাবে ঢোকা যাবে না। শহরের আনাচে কানাচে অস্থায়ী টিকাকরণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। চলছে বিশেষ বিজ্ঞাপনী প্রচার— ‘ডোন্ট মিস আউট। গেট ইউর শট’/ ‘ভ্যাকসিন নিন, নিরাপদে থাকুন’।