দেশে রুশ হানা অব্যাহত। তার মধ্যেই নিজেদের বাহিনীর হাতে ধ্বংস হওয়া রুশ অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শনীতে ইউক্রেনীয়রা। শনিবার কিভে। রয়টার্স
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে খাদ্যাভাবে ভুগছে অর্ধেক বিশ্ব। ইউক্রেনকে বলা হয় ইউরোপের শস্যগোলা। এ দেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি হয় শস্যদানা। বিশেষ করে গম। ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়া থেকে এ পর্যন্ত, গম রফতানি বন্ধ। বিপদে পড়েছে বহু দেশ, বিশেষ করে আফ্রিকা। রাষ্ট্রপুঞ্জের দরবারে অবশেষে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়া। কৃষ্ণসাগর দিয়ে ফের শস্যদানা ও খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু করবে ইউক্রেন। রাশিয়াও শস্য এবং সার রফতানি চালু করবে। গত কাল ইস্তানবুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রে সই করেছে দুই দেশ। আর তার পরেই আজ কৃষ্ণসাগরে বিস্ফোরণ!
গত কালের চুক্তি সই নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। তবে যে ভয় ছিল, সেটাই হল। ইউক্রেনের বন্দর শহর ওডেসায় আজ সকালে আছড়ে পড়ল দু’টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। শুক্রবারের চুক্তিপত্রে রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা কোনও বন্দরে হামলা চালাবে না। বিশেষ করে কোনও জাহাজ সফর শুরু করার আগে। আজকের ঘটনায় তাই স্তম্ভিত সকলেই। ইউক্রেন সেনার মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘উল্লেখযোগ্য ক্ষতি কিছু হয়নি। বন্দরের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে খুব শক্তিশালী রকেট ছোড়া হয়েছিল। খুব ব্যয়সাপেক্ষ হামলা। এ ধরনের অত্যাধুনিক রকেট কম ব্যবহার করা হয়, কারণ খরচ বেশি। এদের নিশানা অব্যর্থ হয়। এটা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, ইচ্ছাকৃত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে আজ।’’
দু’টি ক্যালিবর ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে বন্দরে। আরও দু’টি ছোড়া হয়েছিল। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে সে দু’টি আটকে যায়। বন্দরের একাংশে আগুন লেগে গিয়েছিল। তবে এর বেশি ক্ষতি হয়নি। কোনও হতাহতের খবরও নেই। স্থানীয় ইউক্রেনীয় এমপি ওলেস্কি হনচারেঙ্কো বলেন, ‘‘এক হাতে চুক্তিপত্রে সই করছে, অন্য হাতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে।’’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ বিষয়ক বিভাগের প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আইনকে যে রাশিয়া একেবারেই পরোয়া করে না, এ দিনের হামলায় সেটা স্পষ্ট।’’ তিনি টুইট করেন, ‘‘কাল ইস্তানবুলে চুক্তিপত্রে সইয়ের পরে আজই এই ঘটনা, ভাবা যায় না। শস্যদানা রফতানির জন্য ওডেসার বন্দর খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
গুতেরেসই শস্য রফতানির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ইউক্রেনকে। তিনিই বুঝেছিলেন, এই যুদ্ধের জেরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ অভুক্ত থাকছেন। খাদ্যসামগ্রীর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। আজকের ঘটনায় রাশিয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন গুতেরেস।