যিনি চিকিৎসা করেন, তিনি আবার মার্জার-সরণিতেও তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। যেমন দিয়েছিলেন গত বছর অগস্টে, ভাষা মুখোপাধ্যায়। প্রথম বঙ্গললনা হিসেবে মাথায় পরেছিলেন ‘মিস ইংল্যান্ড’-এর তাজ।
ইংল্যান্ডের সেরা সুন্দরীর তকমা পাওয়ার পরের দিনই জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কাজে। তারপর কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবামূলক কাজে। চিকিৎসকের পেশা থেকে কিছুটা হলেও বেড়েছিল দূরত্ব।
করোনার জেরে দেশ সঙ্কটের মুখোমুখি।তাই এখন সেই দূরত্ব মুছে ফেললেন ভাষা। ইংল্যান্ডে ফিরে আবার হাতে তুলে নিলেন স্টেথোস্কোপ। করোনা ভাইরাসের অতিমারির কালবেলায় তিনি ফের পুরোদস্তুর চিকিৎসক।
বরাবরই ছক ভাঙতে ভালবাসেন তিনি। তাঁর জন্ম ভারতের কানপুরে। ন’ বছর বয়স পর্যন্ত ছিলেন কলকাতায়। তারপর বাবা মায়ের সঙ্গে ইংল্যান্ড পাড়ি। পড়াশোনাও সেখানেই। ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, জার্মান, ফরাসি ভাষায় অনায়াস, সঙ্গে দু’টো ডাক্তারি ডিগ্রি!
অথচ সাত সাগর তেরো নদীর পারে যাত্রাপথের শুরুটা খুব বেশি মসৃণ ছিল না। বন্ধুর অভাবে একা একা লাগত। বেশ কয়েক বার বদল করতে হয়েছিল স্কুল।
ফলে স্কুলবেলায় ‘নবাগত’ পরিচয় রয়েই যেত নামের পাশে। তার উপর ছিল চেহারা নিয়ে খোঁটা। বেঢপ চশমা আর এবড়ো খেবড়ো অসমান দাঁতের জন্য তিনি ছিলেন ‘আগলি বিটি’।
পাশাপাশি বন্ধুরা বলত, ভাষা নাকি খেপাটে আর নাটুকে। তাঁর স্কুলে যাওয়ার একমাত্র আকর্ষণ ছিলেন শিক্ষকরা। কারণ মেধাবী এই ছাত্রী ছিলেন সব স্কুলের শিক্ষকদেরই প্রিয়।
পড়াশোনায় ডুবে থাকা ভাষার নেশা ছিল বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। তার মাঝেই স্বপ্ন দেখতেন মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন বদলে গেল। মহাকাশবিজ্ঞানীর বদলে এ বার ইচ্ছে হল চিকিৎসক হওয়ার।
স্কুল শেষ করার পরে পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেছিলেন। ডাক্তারি পড়ার মাঝপথেই প্রথম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় আসা। তারপর একদিন ‘মিস ইংল্যান্ড’ প্রতিযোগিতার মঞ্চ।
কিন্তু সেখানে সফল হওয়ার পরেও আনন্দে গা ভাসানোর সুযোগ পাননি। বিজয়িনী হওয়ার পরের দিনই ভোর ৪টের ট্রেন ধরে লিঙ্কনশায়ার। যোগ দিয়েছিলেন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক হিসাবে।
ভাষার স্বপ্ন, বদ্ধমূল ধারণাগুলো ভেঙে যাবে একদিন। তিনি মনে করেন, সুন্দরী হলেই বুদ্ধিহীন হবে, এই ভাবনাটা বদলানো দরকার।
পাঁচ-পাঁচটা ভাষায় সমান সাবলীল এই তরুণী বাংলা পড়তে ও লিখতে পারেন। কথাও বলেন নির্ভুল বাংলায়। গত বছর পুজোর সময় দাতব্য সংস্থার কাজে এসেছিলেন কলকাতায়।
ভারতে আবার এসেছিলেন মার্চের শুরুতে। দাতব্য প্রতিষ্ঠান কভেন্ট্রি মার্সিয়া লায়ন্স ক্লাবের আমন্ত্রণে চার সপ্তাহের জন্য এসেছিলেন। এখানে স্কুল শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্যে কাজ করছিলেন তিনি।
ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার ও মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। গত বুধবার ইংল্যান্ডে ফিরেছেন ভাষা। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় তিনি আবার ফিরেছেন চিকিৎসকের ভূমিকায়।
যদিও ফিরেই সরাসরি কাজে যোগ দিতে পারেননি তিনি। নিয়ম মেনে আপাতত তিনি দু’সপ্তাহের জন্য গৃহবন্দি। তারপর তিনিও সক্রিয় সৈন্য হিসেবে শরিক হবেন করোনা ভাইরাস মোকাবিলার যুদ্ধের। (ছবি: ফেসবুক)