নাটালি ডেনিস সুলেমান। সারা বিশ্ব তাঁকে অক্টামম নামেই চেনে। একসঙ্গে আট সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। আর সব মিলিয়ে তাঁর সন্তান সংখ্যা ১৪! কী ভাবে এতগুলো সন্তানের মা হলেন সুলেমান?
ক্যালিফোর্নিয়ার ফুলারটনে জন্ম নাটালির। বাবা-মার একমাত্র সন্তান তিনি। মা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা এবং বাবা রেস্তরাঁর মালিক।
ক্যালিফোর্নিয়াতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ক্যালিফোর্নিয়ার লা পুয়েনটি-র নোগালেস হাই স্কুলে পড়েছেন তিনি। পরে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন। তার পর তিন বছর ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাদেশিক মানসিক হাসপাতালে কাজ করেছেন।
১৯৯৬ সালে সুলেমান বিয়ে করেন মার্কো গুতারেজ নামে এক যুবককে। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০০০ সাল থেকেই তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। আর ২০০৬ সালে ডিভোর্সের আবেদন জানান। ২০০৮ সালে তাঁদের আইনত বিচ্ছেদ হয়।
কেন ডিভোর্স হয়েছিল তাঁদের? বারবার চেষ্টা করেও সন্তান আসেনি সুলেমানের। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে অশান্তি লেগে থাকত। আর সে কারণেই ক্রমে তাঁদের বিচ্ছেদও হয়।
স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়, তা জানার পর থেকেই সুলেমান চেয়েছিলেন টেস্ট টিউব বেবি নিতে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় রাজি ছিলেন না তাঁর স্বামী মার্কো।
বিয়ের এক বছর পর থেকেই সুলেমান আইভিএফ-এর জন্য চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। তাঁর বয়স তখন মাত্র ২১ বছর। ২০০১ সালে সুলেমান প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। ২০০২ সালে ফের আইভিএফ-এ তাঁর এক মেয়ের জন্ম হয়।
এতেই থেমে থাকেননি তিনি। তারপরও বারবার আইভিএফ-এর সাহায্য নিয়ে পরপর ৬টা সন্তানের জন্ম দেন। তাদের মধ্যে চারজন ছেলে এবং দু’জন মেয়ে সন্তান।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনে আগে টেস্ট টিউবের মধ্যে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর নিষেক ঘটানো হয়। তার পর সেই ভ্রুণ স্থানান্তর করা হয় জরায়ুর মধ্যে। সব ক্ষেত্রেই এই নিষেক এবং জরায়ুর মধ্যে ভ্রুণের বেড়ে ওঠা সফল হয় না, সে কারণে চিকিৎসকেরা একাধিক ভ্রুণ তৈরি করে থাকেন।
সুলেমানের ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছিল। ছ’টা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষাগারে তখনও ছ’টা ভ্রুণ অবশিষ্ট ছিল। ২০০৯ সালে সেই সমস্ত ভ্রুণই জরায়ুতে স্থানান্তরের কথা চিকিৎসককে জানান সুলেমান।
পরে জানা যায়, তাঁর চিকিৎসক ছ’টার বদলে মোট ১২টা ভ্রুণ সুলেমানের জরায়ুতে স্থানান্তর করেছিলেন। আর সেই ভ্রুণগুলো থেকে একসঙ্গে আট সন্তানের জন্ম দেন তিনি। একসঙ্গে আট সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম।
পরে ২০১১ সালে বেআইনি ভাবে এতগুলো ভ্রুণ সুলেমানের জরায়ুতে স্থানান্তর করার জন্য ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া মেডিক্যাল বোর্ড।