China Pakistan Trade

আবার ক্ষোভের আগুন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে! চিন-পাকিস্তান ব্যবসা আটকে দিলেন কাশ্মীরিরা

চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের কারাকোরাম হাইওয়ে বন্ধ করে লাগাতার ধর্না দিচ্ছেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নাগরিকেরা। ফের এক বার সেখানে জোরালো হচ্ছে ভারতে সংযুক্তিকরণের আওয়াজ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৫
Share:
০১ ১৯

অবৈধ ভাবে দখলে থাকা কাশ্মীরই এখন পাকিস্তানের গলার কাঁটা! সেখানকার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য। ফলে ইসলামাবাদের এখন ‘ভাতে মরার’ দশা! গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পাক ফৌজ অধিকৃত ভূস্বর্গকে ভারতের সঙ্গে মেশানোর আওয়াজ তুলেছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। সেই শব্দব্রহ্মে ঘুম উড়েছে শাহবাজ় শরিফ সরকারের।

০২ ১৯

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তানে শুরু হয়েছে গণবিক্ষোভ। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ভূস্বর্গের এই এলাকায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে না ইসলামাবাদ। ফলে প্রবল ঠান্ডায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে তাঁদের।

Advertisement
০৩ ১৯

এই পরিস্থিতিতে কারাকোরাম হাইওয়েতে ধর্নায় বসেছেন গিলগিট-বাল্টিস্তানের বাসিন্দারা। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। উল্লেখ্য চিন-পাকিস্তান বাণিজ্যের সিংহভাগ পণ্য চলাচল করে কারাকোরাম হাইওয়ে দিয়ে। ধর্নায় জেরে সড়কটি আটকে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ইসলামাবাদ এবং বেজিংয়ের।

০৪ ১৯

স্থানীয় সূত্রে খবর, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আলি আবাদ এলাকার হুনজ়া উপত্যকায় এই ধর্না শুরু করেন গিলগিট-বাল্টিস্তানের আন্দোলনকারীরা। তার পর থেকে যত সময় গড়িয়েছে, ততই এককাট্টা হয়েছেন তাঁরা। রাতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের প্রায় ১০ ডিগ্রি নীচে চলে গেলেও ধর্নামঞ্চ ছেড়ে অন্যত্র যাননি বিক্ষোভকারীরা।

০৫ ১৯

কারাকোরাম হাইওয়ের এই অংশটি চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর বা সিপিইসি) অংশ। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এলাকাবাসীদের ধর্নায় রাস্তা বন্ধ থাকায় অন্তত ৭০০ ট্রাক আটকে পড়েছে। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে দুই দেশ।

০৬ ১৯

পাক সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গিলগিট-বাল্টিস্তানের ধর্নায় যোগ দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ বা পিটিআই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিশে রয়েছে ইসলামাবাদের ক্ষমতাসীন তথা প্রধানমন্ত্রী শরিফের পার্টি ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ়’ (পিএমএল-নওয়াজ়)।

০৭ ১৯

পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে মুখ খুলেছেন গিলগিট-বাল্টিস্তানের বণিকসভার সভাপতি ইমরান আলি। তাঁর কথায়, ‘‘এই আন্দোলনকে একেবারেই অযৌক্তিক বলা যাবে না। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে কড়া পদক্ষেপ করতে পারে পাক সেনা বা রেঞ্জার্স। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকায় ট্রাকের লাইন লম্বা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে ইসলামাবাদ ও বেজিংয়ের আর্থিক লোকসানের অঙ্ক।’’

০৮ ১৯

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি গিলগিট-বাল্টিস্তানের বাসিন্দাদের আন্দোলনের জেরে ভূস্বর্গের এই এলাকায় পর্যটক আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খুঞ্জেরাব গিরিপথ দিয়েও চিন এবং পাকিস্তান কোনও রকমের বাণিজ্য করতে পারছে না বলে খবর। এর জেরে ইসলামাবাদের বাণিজ্যিক ঘাটতির মাত্রাও বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে।

০৯ ১৯

গিলগিট-বাল্টিস্তানের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনে ২০ থেকে ২১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তাঁরা। অধিকৃত ভূস্বর্গে পাহাড়ি নদীগুলির সাহায্যে যে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে। ফলে বাধ্য হয়ে ধর্নায় বসেছেন তাঁরা।

১০ ১৯

কাশ্মীরের অধিকৃত অংশে একাধিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলির মধ্যে গিলগিট কেআইইউ, বুঞ্জি, ডায়মার বাশা এবং তাঞ্জির জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে কোনওটিতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হয়, কোথাও আবার এর পরিমাণ ৭,১০০ মেগাওয়াট। সিন্ধু নদের উপর বাঁধ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি নির্মাণ করে পাক সরকার।

১১ ১৯

গিলগিট বাল্টিস্তানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কোনও সুবিধাই স্থানীয় বাসিন্দারা পান না। ফলে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। গত বছরেও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একই রকমের বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। ওই সময় ভারতের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার আওয়াজ তোলেন তাঁরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয় ইসলামাবাদ। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

১২ ১৯

২০১৭ সালে বেজিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে যোগ দেয় ইসলামাবাদ। এই প্রকল্পেরই অংশ হল সিপিইসি। সূত্রের খবর, এতে এখনও পর্যন্ত ৬,২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে ড্রাগন। প্রকল্প অনুযায়ী, চিনের শিনজ়িয়ান থেকে পাকিস্তানের বালুচিস্তানের গ্বদর পর্যন্ত রাস্তা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর কাজ করছে বেজিং।

১৩ ১৯

উল্লেখ্য, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের একটি অংশ। এর জেরে প্রথম দিন থেকেই এই প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করে এসেছে নয়াদিল্লি। যদিও তাতে আমল দেয়নি বেজিং এবং ইসলামাবাদ। গোটা পরিকল্পনাটিই এখন ব্যর্থ হতে চলেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

১৪ ১৯

গিলগিট-বাল্টিস্তানের মতোই সিপিইসির প্রবল বিরোধী বালুচিস্তানের বাসিন্দারা। সেখান বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ প্রকল্প এলাকায় বহু বার হামলা চালিয়েছে। সেই আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক চিনা ইঞ্জিনিয়ার।

১৫ ১৯

বিএলএর মতোই পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। কট্টর ইসলামপন্থী এই সংগঠনটিও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেজিংয়ের নাক গলানোকে একেবারেই পছন্দ করে না। আর তাই সিপিইসিতে অহরহ হামলা চালাচ্ছে তারা।

১৬ ১৯

পাশাপাশি আফগানিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ডুরান্ড লাইনকে কেন্দ্র করেও পাকিস্তানের বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) ডিসেম্বর থেকে খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ লাগোয়া সীমান্তে আফগানের কুর্সিতে থাকা তালিবান এবং টিটিপির সঙ্গে ইসলামাবাদের একরকম যুদ্ধই চলছে। ফলে সিপিইসির কাজ আদৌ চিন শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

১৭ ১৯

প্রসঙ্গত, প্রকল্প এলাকায় বার বার চিনা ইঞ্জিনিয়ার এবং শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে অসন্তোষের কথা ইসলামাবাদকে জানিয়েছে বেজিং। পাকিস্তানের তরফে সুরক্ষার আশ্বাস মিললেও বিএলএ বা টিটিপির আক্রমণ বন্ধ হয়নি।

১৮ ১৯

পাক সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্বদর বন্দরের মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্প্রতি বেজিংকে নতুন শর্ত দিয়েছে জেনারেল আসিফ মুনিরের নেতৃত্বাধীন ফৌজ। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ট্রাইকে সক্ষম পারমাণবিক শক্তি ইসলামাবাদকে সরবরাহ করতে হবে। আণবিক শক্তি দিতে না-চাইলে গ্বদর বন্দর ভুলতে হবে ড্রাগনকে।

১৯ ১৯

সম্প্রতি আর্থিক করিডোরের অন্তর্গত এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আলোচনা বন্ধ করেছে দুই দেশ। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে পাক সেনা নতুন শর্ত নিয়ে হাজির হওয়ায় মেজাজ সপ্তম চড়েছে চিনের। এই ধরনের ব্ল্যাকমেল করার জন্য ইসলামাবাদকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিং।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement