Trump on Greenland

মাথায় ঘুরছে ‘সবুজ দ্বীপ’ দখলের ভূত! লক্ষ্যপূরণে ‘বন্ধু’দের পিঠে ছুরি বসাবেন ট্রাম্প?

গ্রিনল্যান্ডকে কব্জা করতে সৈন্য অভিযানেও পিছুপা হবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য দিকে এই ইস্যুতে তাঁকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফ্রান্স এবং জার্মানি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২৬
Share:
০১ ১৮

কুর্সিতে বসেই যুদ্ধে শুরু করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? গ্রিনল্যান্ড দখল করতে ছুটবে আমেরিকার সেনাবাহিনী? যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বিবৃতিকে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে তুঙ্গে উঠেছে তরজা। এই ইস্যুতে এ বার বর্ষীয়ান রিপাবলিক নেতাকে সতর্ক করল ফ্রান্স এবং জার্মানি। যদিও গ্রিনল্যান্ডের অধিকারকে কেন্দ্র করে ইউরোপ এবং আমেরিকার সংঘাতের আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ১৮

চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) ৭ জানুয়ারি গ্রিনল্যান্ড নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন ট্রাম্প। সেখানে খোলাখুলি ভাবেই উত্তর মেরুর দ্বীপটিকে কব্জা করার কথা বলেছেন তিনি। জাতীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ডের আমেরিকার সঙ্গে সংযুক্তিকরণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

Advertisement
০৩ ১৮

এর পরই কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটন কী ভাবে গ্রিনল্যান্ড দখল করবে, তা জানতে চাওয়া হয়। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্প বলেন, এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে যে ব্যবহার করা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। রিপাবলিকান নেতার ওই মন্তব্যের পরই দুনিয়া জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়।

০৪ ১৮

ট্রাম্প ‘অপারেশন গ্রিনল্যান্ডে’র কথা বলতেই একরকম ফুঁসে ওঠেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী মুট এগেদে। পাল্টা হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এলাকা বিক্রির জন্য নয়। যে কেউ এই ভূমি কব্জা করবে, তা আমরা কখনওই বরদাস্ত করব না।’’ আর এ ব্যাপারে ফ্রান্স এবং জার্মানিকে পাশে পেয়েছেন তিনি।

০৫ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন ফরাসি বিদেশমন্ত্রী জ়িন নোয়েল ব্যারট। ট্রাম্প এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ করলে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ান আমেরিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি। পাশাপাশি, বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতাকে সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকার পরিমর্শ দিয়েছেন ব্যারট।

০৬ ১৮

প্রায়ই একই কথা বলতে শোনা গিয়েছে জার্মানির চ্যান্সেলার ওলাফ স্কোলজ়ের গলায়। তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমান সময়ে সীমান্ত লঙ্ঘন করে অন্য দেশের জমি দখলের নীতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সেটা পূর্ব (পড়ুন রাশিয়ার দিক থেকে) বা পশ্চিম (পড়ুন আমেরিকার দিক থেকে) যে কোনও প্রান্তেই ঘটুক না কেন।’’

০৭ ১৮

তবে এই সমস্ত হুঁশিয়ারিকে মোটেই পাত্তা দিচ্ছেন না ট্রাম্প। সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড সফরে যান তাঁর পুত্র জুনিয়র ট্রাম্প। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে এই ইস্যুতে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থে আমেরিকা মনে করে যে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে অপরিহার্য।’’

০৮ ১৮

কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে রয়েছে ‘স্বশাসিত’ সরকার। তবে আন্তর্জাতিক ভাবে ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্কের অধিকার এর উপর স্বীকৃত। ২০১৯ সালে প্রথম বার প্রেসিডেন্ট হয়ে দ্বীপটি কিনে নিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু কোপেনহেগেন পত্রপাঠ না বলে দেওয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর।

০৯ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টর নজর গ্রিনল্যান্ডের উপরে পড়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই দ্বীপটি হাতে থাকলে উত্তর মেরুতে রাশিয়ার একচ্ছত্র প্রতিপত্তি শেষ করতে পারবে ওয়াশিংটন। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে চিন বা রাশিয়া গ্রিনল্যান্ড দখল করলে প্রশ্নের মুখে পড়বে নিরাপত্তা। সেটা যাতে না হয়, তাই আগাম ব্যবস্থা নিতে চাইছেন ট্রাম্প।

১০ ১৮

তৃতীয়ত, গ্রিনল্যান্ডে দুষ্প্রাপ্য ধাতুর ভান্ডার রয়েছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণে লিথিয়াম, নিওবিয়াম, হাফনিয়াম এবং জ়িরকোনিয়াম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপটি কব্জা করার ব্যাপারে প্রবল উৎসাহ রয়েছে ট্রাম্পের।

১১ ১৮

মজার ব্যাপার হল, গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে ইউরোপের যে দেশগুলি ইতিমধ্যেই সুর চড়াতে শুরু করেছে, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে আমেরিকার। ফ্রান্স, জার্মানি বা ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নেটো শক্তি জোটের সদস্য রাষ্ট্র। ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ড দখল করলে সেই সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

১২ ১৮

গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই নেটো থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, এই চুক্তির অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র তাঁদের বৈদেশিক নিরাপত্তার বিষয়টি পুরোপুরি আমেরিকার উপর ছেড়ে দিয়েছে। ফলে এতগুলি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত খরচের ভার বইতে হচ্ছে ওয়াশিংটনকে।

১৩ ১৮

১৯৪৯ সালে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চলাকালীন ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন’ (নর্থ আটলান্টিত ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) বা নেটো তৈরি করে আমেরিকা। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৩২। ট্রাম্পের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানই ছিলেন এই প্রতিরক্ষা চুক্তির অন্যতম রূপকার।

১৪ ১৮

গ্রিনল্যান্ডের পাশাপাশি পানামা খালের দখলও নেওয়ার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। গত শতকের গোড়ায় আমেরিকাই প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগরক্ষাকারী এই খালটি খনন করেছিল। পরে ১৯৯৯ সালে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার হাতে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছিল ওয়াশিংটন।

১৫ ১৮

ট্রাম্পের অভিযোগ, বর্তমানে পানামা খাল দিয়ে যাওয়ার সময়ে আমেরিকার পণ্যবাহী জাহাজগুলিকে বেশি পরিমাণে শুল্ক দিতে হচ্ছে। এই আর্থিক লোকসান কোনও ভাবেই মেনে নিতে রাজি নন তিনি। পানামার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ের মার্টিনেজ় আচা অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘শুধু পানামার জনগণের হাতে এই খালের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তাদের হাতেই এই খালের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’’

১৬ ১৮

গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) নভেম্বরে ভোটে জেতার পর ট্রাম্পের প্রথম নজর পরে কানাডার উপর। স্বাধীন দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ফলে কানাডার আমেরিকায় সংযুক্তিকরণকে সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন বহু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ।

১৭ ১৮

উল্লেখ্য, কানাডার সঙ্গে আমেরিকার সামরিক সহায়তা এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা ভাল প্রতিবেশী ছিলাম। কিন্তু তা চিরকাল তো চলতে পারে না।’’ এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র যদি কানাডার দখল নেয়, তা হলেও ‘গুরুতর কিছু হবে না’ বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৮ ১৮

আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। তার পর সেনাবাহিনীকে গ্রিনল্যান্ড দখলের নির্দেশ দিতে পারবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে নিজেরই তৈরি পশ্চিম ইউরোপের নেটো ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধ বাধবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement