পড়াশোনা শেষ করে কোন দিকে নিজের জীবনকে নিয়ে যাব? কোন পেশা বেছে নেব? এই নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে করতেই আর একটা পছন্দসই চাকরি পেতে পেতেই বেশিরভাগের জীবনের ৩০টা বছর পেরিয়ে যায়।
তার পরও যে চাকরি নিয়ে স্বস্তির জীবন কাটান তাও কিন্তু নয়। বেশির ভাগ মানুষই কাজ নিয়ে কখনও সন্তুষ্ট হতে পারেন না। কোরীয়-আমেরিকান এই তরুণ কিন্তু এই ব্যাপারে সত্যিই মহাকাশযানের গতিতে এগিয়ে চলেছেন।
তাঁর নাম জনি কিম। বয়স বর্তমানে মাত্র ৩৫ বছর। আর এর মধ্যেই তিনি মার্কিন নৌসেনার অফিসার হয়েছেন। চিকিত্সকের ডিগ্রি অর্জন করে ফেলেছেন, এমনকি নাসার বিজ্ঞানীও হয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনি নাসাতেই কর্মরত।
আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসে তাঁর জন্ম। বাবা-মা কোরিয়ান। সন্তানকে একটা ভাল ভবিষ্যৎ দেওয়ার উদ্দেশেই কোরিয়া থেকে আমেরিকা চলে এসেছিলেন তাঁর বাবা-মা।
বাবা খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। আমেরিকায় এসে বাবা একটা মদের দোকান খুলেছিলেন। আর তাঁর মা স্কুল শিক্ষিকার কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে জনি কিমের জন্ম হয় লস অ্যাঞ্জেলসে। স্কুল পাশ করার পর, ২০১২ সালে জনি ইউনিভার্সিটি অব সান দিয়েগো থেকে অঙ্কে স্নাতক হন।
তারপর ২০১৬ সালে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৭ সালে তিনি মেডিক্যাল ইন্টার্নশিপ সম্পূর্ণ করেন।
ডাক্তারি পেশায় আসার আগেই অবশ্য জনি কিম ২০০২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মার্কিন নৌসেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। নেভিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি সিলভার স্টার, ব্রোঞ্জ স্টার, নেভি অ্যান্ড মেরিন কর্পস কমেন্ডেশন মেডেল পান। নেভিতে লেফটেন্যান্ট-এর পদমর্যাদা পেয়েছিলেন তিনি।
২০১২ সালে স্নাতক হওয়ার পর তিনি নেভি ছেড়ে ডাক্তারি পেশা বেছে নেন। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে পড়ার সময়ই তাঁর সঙ্গে নভশ্চর স্কট ই প্যারাজিঙ্কস্কির পরিচয় হয়। তিনিই জনিকে নাসার স্কুলে আবেদন করার কথা জানিয়েছিলেন।
এই স্কুলে সে বছর ১৮ হাজার ৩০০ পড়ুয়া আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে জনি কিমও ছিলেন। জনি নেহাতই এক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নাসায় আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও সে ভাবে ছিল না তাঁর।
কিন্তু ২০১৭ সালে যখন নাসা ফলপ্রকাশ করে জানায়, কতজন পড়ুয়াকে তারা বেছে নিয়েছে। জনির কাছে সেই খবরটা ছিল চমকে দেওয়ার মতোই।
ওই বিপুল সংখ্যাক পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র ১৩ জনকে বেছে নিয়েছিল নাসা। আর সেই ১৩ জনের মধ্যেই ছিলেন জনি কিম।
২০১৭ সালের ২১ অগস্ট নাসার স্কুলে যোগ দেন তিনি। আর ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি নাসা স্কুল থেকে স্নাতক হন।
বর্তমানে জনি কিমের বয়স ৩৫ বছর। জীবনের এই ছোট সময়ের মধ্যেই তিনি একাধারে নেভি অফিসার, চিকিৎসক এবং নাসার বিজ্ঞানী হয়ে গিয়েছেন।
নাসা স্কুল থেকে পাশ করার পর থেকেই জনি নাসাতেই কাজ করে যাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি মহাকাশেও পাড়ি দেবেন তিনি।