গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
প্রশ্নটা শুনে আদালতে উপস্থিত অনেকেই রীতিমতো হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। শাস্তির বদলে ধর্ষক যদি মোটা অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেন? তাতে কি রাজি হবেন? ধর্ষণের শিকার যুবতীকে এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিচারক। তবে সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি যুবতী। ফিরিয়ে দিয়েছেন দেড় লাখ ডলারের ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব। বিচারককে বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না, ওই লোকটা যা করেছে তা অর্থ দিয়ে পুষিয়ে দেওয়া যাবে।’’
বিচার চলছিল গত বৃহস্পতিবার, আমেরিকার লুইজিয়ানার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির আদালতে। কাঠগড়ায় ছিল, বছর পঁয়তাল্লিশের সেড্রিক হিল, ২০০৩ সালে ১৫ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত। সেই কিশোরী এখন ৩১ বছরের যুবতী। তাঁর কাছেই প্রশ্নটা রেখেছিলেন স্টেট ডিস্ট্রিক্ট জাজ ব্রুস বেনেট। ১২ বছরের কারাবাস কমানোর জন্য সেড্রিক যদি তাঁকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেড় লাখ ডলার দেয়? তা কি নেবেন তিনি? সঙ্গে সঙ্গে সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন ওই যুবতী। তিনি চান, ধর্ষণের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের যে ১৬ বছর কেড়ে নিয়েছে, সে সময়টাই জেলে কাটাক সেড্রিক।
ধর্ষণের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘গোটা অভিজ্ঞতাটাই যেন একটা সিনেমার মতো, একটা ভয়ের সিনেমা।’’ ধর্ষকের কড়া শাস্তির জন্য দীর্ঘ দিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সে কথা জানিয়ে ওই যুবতী বলেন, ‘‘জীবনের অর্থেক সময়েরও বেশি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমি ক্লান্ত। আমি ক্ষুব্ধ। এ ধরনের অভিজ্ঞতায় এক জন মানুষের জীবনকে ক্ষয় ধরিয়ে যায়। আমার অস্তিত্বও ক্ষয়ে গিয়েছে। এখনও বুঝে ওঠার চেষ্টা করছি, আমি কে!’’
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে সেনা-বিজেপি দ্বন্দ্বে নয়া মোড়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে শিবসেনার ইস্তফা
আরও পড়ুন: গোলাপি বেলেপাথর, চন্দনকাঠের দরজা... কেমন দেখতে হতে পারে প্রস্তাবিত রামমন্দির? দেখে নিন
লুইজিয়ানার ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৪-তে সেড্রিক হিলের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করে পুলিশ। ২০০৩-এর ওই ধর্ষণের প্রমাণ হিসাবে তার ডিএনএ মিলে যায় গত বছর। এর পর গত বছরের অগস্টে তাকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তবে সেড্রিককে ১২ বছরের কারাবাসের সাজা দিলেও সেই সঙ্গে ওই প্রস্তাবও দিয়ে বসেন বিচারক ব্রুস বেনেট। বিচারকের এই আচরণে একেবারেই হতবাক ইস্ট ব্যাটন রুজ ডিস্ট্রিক্টের আইনজীবী হিসার মুর। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবরই অদ্ভুত আচরণ। জানি না, বিচারক এ কথা কেন বললেন। আমার মনে হয়, হয়তো ওই যুবতীকে সাহায্য করার জন্য এমনটা করেছেন তিনি।’’
আরও পড়ুন: ‘সর্বনাশা পদক্ষেপ’, সেনার সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে দলকে সতর্কবার্তা কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের
আরও পড়ুন: এমবিএ-র চাকরি ছেড়ে মাশরুম চাষ করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় দিল্লির এই তরুণীর
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিচারক ব্রুস বেনেটে অবশ্য জানিয়েছেন, ধর্ষণের সাজা কাটিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে সেড্রিক, এটা বোধহয় ঠিক নয়। এই অপরাধের ফলে যে মানসিক আঘাত পেয়েছেন ওই যুবতী, তার পরিবর্তে কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। অন্তত অর্থনৈতিক ভাবে যদি কিছুটা সুরাহা হয়, সে চেষ্টাই করেছেন তিনি।