শুধু মাত্র মানুষের জীবনের ক্ষেত্রেই নয়, করোনা মারণ হয়ে উঠেছে অর্থনীতির ক্ষেত্রেও। ধাপে ধাপে সেখানেও ছড়িয়েছে সংক্রমণ। গোটা দুনিয়া জুড়েই কার্যত থমকে গিয়েছে অর্থনীতির চাকা। নতুন কর্মসংস্থান দূর অস্ত্, উল্টে কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। শুধু শরীরে নয়, করোনা হামলা চালিয়েছে মানুষের পকেটেও। তাই দুনিয়া জুড়েই উঠছে ত্রাহি ত্রাহি রব। এমন সাঁড়াশি চাপ থেকে রেহাই পেতে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে একাধিক দেশ। সেই তালিকায় রয়েছে ভারতও। মঙ্গলবার বড়সড় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি)-এর একটা বড় অংশ খরচ করা হচ্ছে ওই খাতে। কোন দেশ কত টাকা ঘোষণা করল, দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
এশিয়া, ইউরোপের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু দিন ধরেই করোনার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে আমেরিকা। সেখানে সাড়ে ১৩ লক্ষের বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত ৮২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। সে দেশের শ্রম দফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিলেই কাজ হারিয়েছেন ২ কোটি ৫ লক্ষ মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই সময়ে জিডিপির ১৩ শতাংশ আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে ঘোষণা করেছে ট্রাম্প সরকার, যার পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি ডলার।
জাপানে করোনা আক্রান্ত ১৬ হাজারের কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যাও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু অন্যান্য দেশের সংক্রমণের ঢেউ ধাক্কা দিয়েছে সেখানকার অর্থনীতিতেও। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে মোটা অঙ্কের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে জাপান সরকার যা দেশের জিডিপির ২১.১ শতাংশ।
জার্মানিতে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষের। অচল হয়ে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে জিডিপির ১০.৭ শতাংশ খরচ করছে অ্যাঞ্জেলা মের্কেলের জার্মানিও।
করোনা গ্রাসে ফ্রান্সও। ১ লক্ষ ৭৮ হাজার মানুষ সংক্রমণে আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ২৬ হাজারের বেশি মানুষের। লকডাউনের জেরে কার্যত থেমে গিয়েছে ফ্রান্সের অর্থনীতি। এমন থমকে থাকা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে জিডিপির ৯.৩ শতাংশ খরচ করা হচ্ছে।
ভারতে করোনা সংক্রমণ ৭৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। দেশ জুড়ে তৃতীয় দফার লকডাউন চলছে। এই সময়ে দেশের জন্য প্রায় ২৬ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার অর্থাৎ ২০ লক্ষ কোটি টাকা আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যা দেশের জিডিপির ১০ শতাংশ।
লকডাউনের জেরে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্রিটেনও। দেশের জিডিপির ৫ শতাংশ আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের বাজারকে চাঙ্গা করতে জিডিপির ৫.৭ শতাংশ আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে ঘোষণা করেছে ইটালিও। ওই অঙ্কের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি ডলার।
অর্থনীতিকে সচল রাখতে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকেও। দেশের জিডিপির ২.২ শতাংশ খরচ করছে তারাও।
করোনার জেরে থমকে স্পেনের অর্থনীতিও। সে দেশের জিডিপির ৭.৩ শতাংশ খরচ করা হচ্ছে আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে। যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলার।
আর্থিক পরিস্থিতিকে টেনে তুলতে দেশের জিডিপির ১২ শতাংশ আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে খরচ করছে সুইডেনও। সেই টাকার অঙ্ক প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলার।
করোনা প্রথম ধরা পড়েছিল চিনে। অর্থনীতিতে তার জোরাল ধাক্কা সামলাতে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পথে হাঁটতে হয়েছে বেজিংকেও। জিডিপির ৩.৮ শতাংশ আর্থিক প্যাকেজ হিসাবে খরচ করছে চিন। ওই অঙ্কের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার।