চাপ ও হুমকির মুখে প্রশাসন নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ করে দিয়েছে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নিজেদের ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন, সহাবস্থানের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়গুলি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাল বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বাংলাদেশে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার রংপুরে সনাতনী জাগরণ জোটের ডাকা বিশাল একটি জনসভায় ধর্মীয় নেতারা বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনে তাঁদের কোনও প্রতিনিধিকে রাখেনি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ বার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া, অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে এই সংস্কার মেনে নেওয়া হবে না। এর মধ্যেই কট্টরপন্থী হেফাজতে ইসলামের চাপ ও হুমকির মুখে প্রশাসন নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ করে দিয়েছে। লালন অ্যাকাডেমির চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে এই মেলা ও সাধু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে।
চট্টগ্রামের পরে রংপুরে শুক্রবার সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন। এই কর্মসূচিতে প্রশাসন পদে পদে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ সংগঠকদের। রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। পরিবর্তে শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে অন্য একটি মাঠে সমাবেশ করতে বলা হয়। দূর দূর থেকে আসা প্রায় ১০০ বাসকে রংপুরে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ধর্মগুরুরা। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে এই কাজ করেছে পুলিশও। কাউনিয়ায় বাস থামিয়ে সংখ্যালঘুদের মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
তার পরেও মানুষের ঢল নামে রংপুরের সভায়। সেখানেই ইসকন-এর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পরে তিন মাস হয়ে গেছে। পরিস্থিতির কোনও অগ্রগতি নেই। বরং প্রতিটি জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘরে এখনও লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি ও চাকরিচ্যুতি চলছে।” তিনি অভিযোগ করেন, উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক একটি অংশ মিলে সনাতনী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেখানে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি কেউ নেই। সংবিধানে হিন্দুদের ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন এবং দেশের সহাবস্থান যদি অন্তর্ভুক্ত না হয়, কোনও পরিবর্তন মানব না।”
বাংলাদেশে একের পর এক মাজার ভাঙা এবং বাউল-সুফিদের উপরে হামলার পরে এ বার নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ করা হল। হেফাজতে ইসলামের আপত্তিতে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। স্থানীয় ওসি জানিয়েছেন, “হুমকির পরে লালন ভক্তদের নিরাপত্তার জন্যই মেলা করার অনুমতি দেওয়া হল না।” স্থানীয় মসজিদের ইমাম আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, “মেলায় নাচ-গানের মতো ইসলাম-বিরোধী কাজ হয়। সেটি বন্ধ করা সবার দায়িত্ব।”