১৪ বছরের এক কিশোরের কাছে অর্থের অর্থ কী? এই বয়সি কারও কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আর সেভিংসের মানে, উত্তরটা গোলমেলে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তারা শুধু মাথা ঘামায় পকেটমানি নিয়ে। এই টাকা ইচ্ছামতো খরচ করে কৈশোরের স্বাদ মিটিয়ে থাকে তারা।
অথচ এই বয়সের এক কিশোর সত্যিকারের ব্যাঙ্ক বানিয়ে সাড়া বিশ্বকে একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেই ব্যাঙ্কের টাকা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও চলছে।
বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ ব্যাঙ্কার হোসে অ্যাডলফো কুইসোকালা কন্ডোরি। পেরুর বাসিন্দা হোসে।
কেন ব্যাঙ্ক বানানোর কথা তার মাথায় এল? কী ভাবেই বা আস্ত ব্যাঙ্ক বানিয়ে ফেলল হোসে?
মাত্র ৭ বছর বয়সে প্রথম চিলড্রেন’স সেভিংস ব্যাঙ্ক গড়ে তোলে হোসে। প্রথমে তার সহপাঠীরাই ছিল গ্রাহক।
এখন তার ব্যাঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা হাজার দু’য়েক! ৮ জন কর্মী নিয়ে ব্যাঙ্ক চালায় হোসে। তাঁরা সকলেই হোসের থেকে বয়সে অনেক বড়।
হোসের ব্যাঙ্কের নাম বার্টসেলানা স্টুডেন্টস ব্যাঙ্ক।
হোসে দেখেছিলেন কী ভাবে তার সহপাঠীদের একাংশ বাজে খরচ করে পকেটমানি শেষ করে। উল্টো দিকে কোনও সহপাঠী হয়তো টাকার অভাবে বইটাও ঠিক মতো কিনে উঠতে পারে না। তখনই তার মাথায় এই অভিনব ভাবনা আসে।
তার ব্যাঙ্কের সবচেয়ে অভিনব বিষয় হল গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতে হয় না। বদলে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের জিনিস রাখতে হয়।
যে যত প্লাস্টিক জমাতে পারবেন সেই মতো তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকাও জমবে। সেই সঞ্চিত টাকা ডেবিট কার্ড দিয়ে লেনদেনও করতে পারবেন গ্রাহক।
ব্যাঙ্ক শুরু হয়েছিল ক্লাসরুম থেকে। ব্যাঙ্ক চালু করে ডেবিট কার্ড ছাপিয়ে প্রথমে সহপাঠীদের দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টিতে এতটাই কৌতূহল জন্মায় যে ক্রমে স্কুলের বাইরেও প্রচুর গ্রাহক তাঁর ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেন।
এর ফলে দুটো উদ্দেশ্য পূরণ হয়। এক, ছোটরা উপার্জন করতে শুরু করল এবং দুই, পেরুর রাস্তাঘাট প্লাস্টিক জঞ্জাল মুক্ত হল।
এই কাজের জন্য ২০১৮ সালে হোসে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পুরস্কার পায়।
এই কম বয়সেই বিশ্বকে সবুজ করার পাশাপাশি সহপাঠীদের পকেটও চিরসবুজ রাখার কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে হোসে।