খুব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সান পিয়েরো পাট্টি। এই শহরে নাকি টিকতে পারছেন না কোনও ইয়ং ছেলেমেয়ে। একে একে সবাই এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
ইতালির সিসিলিয়ার একটি ছোট শহর এই সান পিয়েরো পাট্টি। সান পিয়েরোর এই পরিস্থিতির কথা যিনি শোনেন, অবাক হন। যেমনটা হয়েছেন এই গ্রামেরই মেয়ে ৩৪ বছরের কাটিয়া নেপুমাসিনো। নেপুমাসিনোর জন্ম সান পিয়েরোতে হলেও কর্মসূত্রে এতদিন তিনি বাইরে থাকতেন।
বেশিরভাগ সময়টাই জার্মানিতে কেটেছে তাঁর। সম্প্রতি তিনি স্থির করেছিলেন, এ বার শহরের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বাকি জীবনটা সান পিয়েরোতেই কাটাবেন। কিন্তু শহরে ফিরে তিনিও হতবাক। যাঁদের সঙ্গে ছোট থেকে খেলাধুলো করে বড় হয়েছিলেন তিনি, তাঁদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়েছেন! তাঁর দলের মাত্র দু’জন যুবতী বর্তমানে রয়ে গিয়েছেন। তাঁরাও নাকি সুযোগ খুঁজছেন এলাকা ছাড়ার।
কেন তাঁরা চলে গিয়েছেন? নেপুমাসিনো খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন চাকরির খোঁজে তাঁরা শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কোনও কাজের সুযোগই নাকি নেই ইতালির এই শহরে। ফলে বাধ্য হয়েই এলাকার অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা কর্মসূত্রে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছেন। দ্রুত কমছে জনসংখ্যা।
এই হারে এলাকা খালি হতে থাকলে খুব দ্রুত এটা ভুতুড়ে শহর বা গোস্ট টাউনে পরিণত হবে! যা আটকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছেন মেয়র এবং শহরবাসী। সম্প্রতি নতুন ভাবনা বার করেছেন তাঁরা। কম টাকায় বাড়ি বিক্রি। অর্থাৎ শহরের যে সমস্ত পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে, বা এমন বাড়ি যা মালিকের খুব একটা কাজে লাগে না, সেগুলো সবই লোভনীয় দামে বিক্রি করে দেওয়া।
প্রতিবেশী শহর গ্যাঙ্গিও একসময় ঠিকই একইরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল শহর। প্রাণ ফেরাতে মাত্র ১ ইউরো মূল্যে বাড়ি বিক্রি করতে শুরু করে। তাতে সাফল্যও মেলে। খুব কম মূল্যের ওই বাড়ি অনেকেই কিনে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন। মানুষের বসতি যত বেড়েছে, তত সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়েছে।
গ্যাঙ্গির এই সাফল্য গ্রামের মেয়র সালভাদর ফিওরেকে একই সিদ্ধান্তে উপনীত করে। নিজেদের এলাকাকে ভুতুড়ে শহর হয়ে ওঠা থেকে বাঁচাতে শহরের সব বাসিন্দাও এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে যান।
মারিয়া কনসিট্টা আব্রামো নামে এক মহিলা প্রথম এগিয়ে এসেছেন। বহু বছর আগে এক মহিলার থেকে আব্রামো পরিবার সান পিয়েরোতে বাড়ি কিনেছিলেন। সেই বাড়িটা ব্যবহার প্রায় করেনই না আব্রামো পরিবার। মূলত স্টোরেজ ছিল এই বাড়িটা।
বাড়িটায় দু’টো ঘর রয়েছে, ছোট চিলেকোঠা এবং একটি ভূগর্ভস্থ গ্যারাজ রয়েছে বাড়িতে। এই বাড়িটাই আব্রামো পরিবার এক কাপ এসপ্রেসোর (এক ধরনের ইতালিয়ান কফি) দামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সান পিয়েরোর পরিস্থিতি ঠিক কেমন? বাসিন্দাদের মতে, দু’টো দিক রয়েছে এই শহরের। একটা দিক ভীষণ উন্মুক্ত, শান্ত, অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। আর একটা দিক ঠিক যেন খাঁচা। বেশি দিন যেখানে থাকলে সকলেরই দমবন্ধ হয়ে আসছে।
তবে শহরের মেয়র একটা বিষয়ে শক্ত থাকতে চাইছেন। কোনও অভিবাসীকে তিনি এই শহরে ঠাঁই দিতে রাজি নন। অত্যধিক সংখ্যায় অভিবাসীরা এই শহরে ঢুকতে শুরু করলে, সেটা কারও পক্ষেই ভাল হবে না, তাঁর মত।
প্রতিবেশী শহর গ্যাঙ্গির মতো সান পিয়েরোও ফের ভরে উঠবে, শহর ছেড়ে চলে যাওয়া সমস্ত ইয়ং ছেলেমেয়েরা ফের তাঁদের বাড়ি ফিরতে পারবেন, এই আশা নিয়েই এখন বেঁচে রয়েছে ইতালির এই ছোট শহর।