গোলান মালভূমির চিত্র। ছবি: রয়টার্স।
বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু সিরিয়া নিয়ে উদ্বেগ কমেনি ইজ়রায়েলের। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে সিরিয়া এবং ইজ়রায়েলের মাঝে ‘বাফার জ়োন’ গোলান মালভূমিতে শক্তি বৃদ্ধি করছে ইজ়রায়েল। রবিবার এমনটাই জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে গোলানে শক্তি বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোলানকে শক্তিশালী করা ইজ়রায়েল রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে।’’ প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির পরেই ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজ়রায়েল কাট্জ় বলেন, ‘‘সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে ইজ়রায়েলের। সিরিয়ার বর্তমান বিদ্রোহী সরকার মধ্যপন্থী ভাবমূর্তি বজায় রাখলেও পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। তাই সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত।’’ গত সপ্তাহে গোলানের মাউন্ট হেরমন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার নতুন করে ‘দখল’ নিয়েছে ইজ়রায়েল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণে দখলীকৃত ওই অঞ্চলগুলিতে চলতি শীতের মরসুমে মোতায়েন থাকবে ইজ়রায়েলি বাহিনী। গোলানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার দিকেও নজর দিয়েছে ইজ়রায়েল সরকার। নেতানিয়াহুর কার্যালয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে গোলানে জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য ১১ মিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার, ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ৯৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
গোলান মালভূমি নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে চর্চা চলছে মধ্যপ্রাচ্যে। ১৯৬৭ সালে ছ’দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইজ়রায়েলের দখলে চলে গিয়েছিল। পরে তা ফিরিয়ে দিলেও একটি অংশ নিজেদের দখলেই রেখে দেয় ইজ়রায়েল। ১৯৮১ সালে তা ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। যদিও আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশই গোলান মালভূমির ওই অংশকে ইজ়রায়েলের অংশ বলে মান্যতা দেয়নি। দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ ঠেকাতে ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে গোলান মালভূমিতে বাফার জ়োন তৈরি করা হয়। বাফার জ়োনের এক প্রান্তে রয়েছে সিরিয়া এবং অন্য প্রান্তে গোলান মালভূমির ইজ়রায়েল অধিকৃত অঞ্চল। ২০১৯ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোলানের উপর ইজ়রায়েলি সার্বভৌমত্বকে সরাসরি সমর্থন জানান। কিন্তু তখনও তা মানেনি অধিকাংশ রাষ্ট্র।
গোলানে প্রায় ৩১,০০০ ইজ়রায়েলির বাস। এ ছাড়াও বাস করেন ২৪ হাজার দ্রুজ়, যাঁরা আরবের এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এঁরা বেশির ভাগই আবার নিজেদের সিরীয় বলে পরিচয় দেন। যদিও ইজ়রায়েলের বিবৃতির পর সিরিয়ার বিদ্রোহী দলের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির দাবি, গোলান নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। বরং সিরিয়ার উপর লাগাতার হামলাকে ন্যায্যতা দিতেই এ সব অজুহাত দিচ্ছে ইজ়রায়েল। কিন্তু এই মুহূর্তে নতুন করে সংঘাতে জড়াতে আগ্রহী নয় সিরিয়ার সদ্য ক্ষমতায় আসা সরকার। বরং দেশ গড়াই এখন তাদের লক্ষ্য, এমনটাই জানিয়েছেন জোলানি।