নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং জাস্টিন ট্রুডো। —ফাইল চিত্র।
আরও এক বার ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বৃহস্পতিবার ভারত থেকে কানাডার ৪১ জন কূটনীতিককে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল অটোয়া। আর তার পরের দিনই ভারত সরকারকে তোপ দেগে ট্রুডো দাবি করলেন যে, নয়াদিল্লি ভারত এবং কানাডা দুই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কঠিন করে তুলছে। অন্য দিকে, কূটনীতিকদের সরানো নিয়ে কার্যত কানাডার পাশেই দাঁড়িয়েছে আমেরিকা এবং ব্রিটেন। কানাডার কূটনীতিকদের যাতে ভারত না সরায়, তার জন্য নয়াদিল্লির কাছে আর্জি জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
শুক্রবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে ট্রুডো বলেন, “ভারত সরকার ভারত তো বটেই, কানাডারও লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে অভাবনীয় ভাবে কঠিন করে তুলছে। কূটনীতির মৌলিক ধারণাকে লঙ্ঘন করেই তারা এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।” ঘটনাচক্রে, আমেরিকা এবং ব্রিটেনও ভারতকে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত কূটনীতির সাধারণ শর্তগুলির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ভারত অবশ্য কূটনৈতিক ধারণাকে লঙ্ঘন করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
কানাডার মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মানুষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। কানাডার উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় ৪০ শতাংশ ভারতীয় পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করে থাকে। ট্রুডো রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তেমনই কানাডায় পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়ারাও সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। ৪১ জন কূটনীতিককে সরিয়ে নেওয়ার পর ভারতে এখন কানাডার ২১ জন কূটনীতিক রইলেন। ভারতের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল যে, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভারতে কূটনীতিকদের সংখ্যা কমানো উচিত কানাডার।
খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে। আর সেই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে কানাডা এবং ভারতের মধ্যে। নিজ্জরের হত্যায় ভারতের দিকে কানাডা অভিযোগের আঙুল তোলার পর থেকেই কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। সেই টানাপড়েন এখনও অব্যাহত।
আর সেই টানাপড়েনের মধ্যে ভারত থেকে ৪১ জন কূটনীতিককে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায় কানাডা। এই কূটনীতিকদের পরিবারের ৪২ জন সদস্যকেও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি জারি করে ভারত থেকে তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় কানাডার বিদেশ মন্ত্রক। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ভারত সরকার জানিয়েছে, এখান থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ২০ অক্টোবরের মধ্যে। আর তার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে জোলি জানান, চণ্ডীগড়, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুতে কানাডার যে সব উপদূতাবাস রয়েছে, সেগুলির কাজ আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। যে ভাবে কূটনীতিকদের সরানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাতে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে আরও প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান জোলি।