ভারতের বিদেশসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার হাতে শুভেচ্ছা স্মারক দিচ্ছেন বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন (ডানে)। ছবি: বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের সৌজন্যে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করলেন ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। করোনার টিকা তৈরিতে দু’দেশের পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাসুদ বিন মোমেন। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে এসেছে দু’দেশের মধ্যে বিমান চলাচল, যৌথ পর্যালোচনা, মুজিববর্ষ, রোহিঙ্গার মতো বিষয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের বিদেশসচিব সাংবাদিকদের জানান, করোনাকালের অর্থনৈতিক সঙ্কট ও অন্যান্য বিষয়ে দু’দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক কী ভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দু’দেশের সম্পর্কে যে অপ্রীতিকর বিষয়গুলি আছে, তা নিয়েও কথা হয়েছে। আমরা সীমান্ত-হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী মাসে আমরা চেষ্টা করব বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক করার জন্য।’’
সম্প্রতি বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত দিযে ভারত-বাংলাদেশ মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে, যা দু’দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহণে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সেই বিষয়টি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মোমেন বলেন, ‘‘আপনারা জানেন বেনাপোল-পেট্রাপোলে পণ্য পরিবহণ যে ভাবে আটকে গিয়েছিল, সেখানে ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য চলাচলে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্থলপথও খুলে দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হারে বাড়ছে উদ্বেগ, স্বস্তি সুস্থতায়
ভারতের বিদেশসচিব দিল্লি থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে মোমেন জানান, কোভিডের সময়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই। সেই সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করতেই তাঁর এই সফর। কোভিড নিয়ন্ত্রণে ভারতের প্রচেষ্টা চলছে এবং টিকা তৈররি ভ্যাকসিন তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, ট্রায়াল রানের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং তাঁরা ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেছেন, যে ভ্যাকসিনগুলি তৈরির কাজ চলছে, সেগুলি শুধু ভারতের জন্য নয়, আমাদের জন্যও দেওয়া হবে। ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগও তৈরি হতে পারে।’’
দু’দেশের মধ্যে ‘এয়ার বাবল’-এর প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘‘এটি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে এবং আশা করছি এটি আমরা দ্রুত করে ফেলতে পারব।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘প্রচুর বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়মিত ব্যবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, তাঁদের যাওয়া-আসা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। উড়ান চালু হলে সে ক্ষেত্রে আবার তাঁরা চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।’’
আরও পড়ুন: জরিমানা ১০ লাখ, আপাতত নেওয়া যাবে না অগ্রিম, ডিসানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কমিশনের
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে। মোমেন বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। অনেক চেষ্টা করে এসেছি, যাতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজুলেশন পাস করা যায়।’’ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য কয়েকটি দেশের বিরোধিতার কারণে এটি হয়নি জানিয়ে বিদেশসচিব বলেন, ‘‘আমরা ভারতের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। এক দিকে ভারতের সঙ্গে মায়ানমারের ভাল সম্পর্ক, এবং ভারত পরিকাঠামো-সহ বেশ কিছু জিনিস তৈরি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এগুলি যাতে তারা অব্যাহত রাখে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাতে মায়ানমারকে চাপ দেয় সে বিষয়ে দরবার করেছি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু কোভিডের কারণে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাকি সময়ে কী ভাবে এটি এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর-সহ বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে কীভাবে অনুষ্ঠান করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। ভারতও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানান বাংলাদেশের বিদেশসচিব।