১৯৬৩ সালের ইটালির ফিল্ম ‘ওমিক্রন’-এর পোস্টার (বাঁ-দিকে)। বেকি চিটলের ফোটোশপ করা যে পোস্টারটি নেটে ছড়িয়েছে।
দিন সাতেক হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে একটি গ্রিক নাম— ‘ওমিক্রন’। করোনার নতুন সন্দেহজনক স্ট্রেনটির এই নাম রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এক সপ্তাহ আগেও এর কথা কেউ জানত না। কিন্তু সে নাম জানাজানি হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে ১৯৬৩ সালে এক ফিল্ম, তারও নাম সেই ‘ওমিক্রন’।
ব্যস, সত্যি-মিথ্যে নানা খবর ভাইরাল নিমেষে। তৈরি হয়ে গিয়েছে মিম। শেয়ার হয়েছে ছবির পোস্টার। তাতে লেখা ‘দ্য ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট’। এ-ও কি কাকতালীয়! প্রায় ষাট বছর আগে এ নিয়ে সিনেমাও হয়ে গিয়েছে!
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের উহানে যখন প্রথম ধরা পড়েছিল করোনা-সংক্রমণ, তখন শোরগোল ফেলে দিয়েছিল হলিউডের একটি ফিল্ম। ২০১১ সালের ছবি ‘কন্টাজিয়ন’। ম্যাট ডেমন, জুড ল, কেট উইনস্লেট অভিনীত সেই ছবির প্লট ছিল, এক রহস্যজনক ভাইরাস সংক্রমণ। তাতে হংকং থেকে আমেরিকা ফিরে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন এক তরুণী। হাসপাতালে মারা যান তিনি। জানা যায়, এক রহস্যময় ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তরুণী। এই ছবিতে অতিমারিতে শুধু আমেরিকাতেই মৃত্যু হয় ২৫ লক্ষ বাসিন্দার। বিশ্ব জুড়ে ২ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি প্রাণহানি ঘটে। ফিল্মের গল্পেও দেখানো হয়, চিনে বাদুড় থেকে ভাইরাসটি সংক্রমণ ঘটে শুয়োরের শরীরে। তার পরে শুয়োরের মাংস খেয়ে ভাইরাস ছড়ায় মানুষের মধ্যে।
বাস্তবের ঘটনা থেকে অসংখ্য ফিল্ম তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু ফিল্মের কাহিনি যদি ভবিষ্যতে মিলে যায় বাস্তবের সঙ্গে! ‘কন্টাজিয়ন’ ছবির ক্ষেত্রে তাই ঘটে গিয়েছে। ২০১১ সালে সিনেমা হলের পর্দায় যা দেখা গিয়েছিল, বাস্তবে তা ঘটে চলেছে গত দু’বছর ধরে।
কিন্তু আবার ‘ওমিক্রন’-এও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! না, ১৯৬৩ সালের ইটালির এই সিনেমায় কোনও ভাইরাস নেই। এই গল্পে ভিন্গ্রহের এক প্রাণী পৃথিবীতে এসে এক ব্যক্তির মৃতদেহ কব্জা করে। মানবদেহে ঢুকে সে পৃথিবীবাসীর আদবকায়দা শিখতে থাকে। ভবিষ্যতে পৃথিবী আক্রমণ করলে তারা যাতে যুদ্ধে জিততে পারে, এ ছিল তারই প্রস্তুতি। পৃথিবীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রমে বুঝতে পারে ভিন্গ্রহী। করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের নাম জানাজানি হতে ইউটিউবে ভেসে উঠেছে সাদাকালো যুগের এই ফিল্মটি। সিনেমার একাধিক প্রিন্ট আপলোড হয়েছে নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরে।
তৈরি হয়েছে মিম। তাতে সিনেমার পোস্টারে নাম করে দেওয়া হয়েছে ‘দ্য ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট’। ওই নামে অবশ্য কোনও ফিল্ম নেই। সেই পোস্টারটি আবার ১৯৭৬ সালের একটি স্পেনীয় ফিল্মের। পোস্টারের ছবিটি এক রেখে নাম বদলে ‘দ্য ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট’ করে দেওয়া হয়েছে। নেটিজ়েনরা অবশ্য এই ‘রসিকতা’ প্রথমে ধরতে পারেননি। পরিচালক রামগোপাল বর্মার মতো অনেকেই শেয়ার করতে থাকেন সেই পোস্টার। পরে জানাজানি হয় পোস্টারটি ‘ভুয়ো’। যিনি এটি তৈরি করেছিলেন, সেই বেকি চিটল জানতে পেরে টুইট করেন, ‘‘আমার তৈরি পোস্টারগুলি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। মজা করে তৈরি করেছিলাম। কেউ সত্যি ভেবে নেবেন না। ৭০-এর দশকের বেশ কিছু সায়েন্স ফিকশন ফিল্মের পোস্টার ফোটোশপ করে ওগুলো তৈরি করেছিলাম।’’