চূড়ান্ত সতর্কতা বাংলাদেশে। —নিজস্ব চিত্র।
শেষ পর্যন্ত বুলবুল বাংলাদেশের দিকেই ধেয়ে আসছে। ঝড়ের পথ ও গতি এ রকম থাকলে বাংলাদেশেই বুলবুলের আছড়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সে দেশের আবহাওয়া দফতর।
বুলবুল বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। শনিবার মাঝরাতে খুলনা–বরিশাল এলাকার স্থলভাগে তা আঘাত হানতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। তবে ওই আঘাত হানার আগে কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি, এমনটাই মত তাঁদের।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, বুলবুলের কারণে সমুদ্রে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু হয়ে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনার কথা। মন্ত্রকের সচিব জানান, ৫৫ হাজার ৫১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে নেমেছেন। বুলবুলের প্রবাব পড়বে খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পটুয়াখালি, ভোলা ও পিরোজপুর জেলায়। সব মিলিয়ে ১১ জেলায় সতর্কতামূলক সঙ্কেত পাঠানো হয়েছে। ওই জেলাগুলিতে ঝড়ের আগেই শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
বুলবুলের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ের সাতকাহন
বাংলাদেশের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘এখন যা গতিপ্রকৃতি, তাতে ঝড়টি বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তার গতিবেগ আগের চেয়ে বেশি। ঝড়টি এখন যে গতিতে আসছে, তাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। খুলনা অঞ্চল দিয়ে বুলবুল বাংলাদেশে হানা দেবে, এমনটাই সম্ভাবনা।’’
ঢাকার আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তার আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আরও উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮২০ কিলোমিটার দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকলেও শুক্রবার সকালে সে আরও এগিয়ে এসেছে। এখন সেটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান বুলবুলের। মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে সে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বুলবুল আরও কাছে এসে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। মংলা বন্দরে ৭ নম্বর, চট্টগ্রামে ৬ নম্বর, কক্সবাজারে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
বুলবুলের কারণে সুন্দরবনে পর্যটকদের যাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘বুলবুল’-এর মোকাবিলার তৈরি প্রশাসন, ৭ জেলার প্রাথমিক স্কুল বন্ধ, পাশে কেন্দ্রও
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সুন্দরবনের দুবলার চরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবের আয়োজন বন্ধ করে হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
সুন্দরবনের গভীরতম এলাকা দুবলার চরে গত ১০০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমায় পালিত হয়। এ বছরের তিথি অনুযায়ী আগামী ১০ ও ১২ নভেম্বর রাস উৎসব আয়োজিত হওয়ার কথা। এখানকার পুণ্যস্নান ও উৎসবে প্রায় ৩০ হাজার পুণ্যার্থী যোগ দেওয়ার কথা ছিল। একই সঙ্গে বুলবুলের আশঙ্কায় সুন্দরবনে পর্যটকদের যাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
অন্য দিকে বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আটকে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। খারাপ আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ-সহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা সেখানে আটকা পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার যাঁরা সেন্ট মার্টিন যেতে চেয়েছিলেন, তাঁরাও যেতে পারেননি। এক হাজারের বেশি পর্যটক টেকনাফ থেকেই এ দিন ফিরে গিয়েছেন।