—ফাইল চিত্র
ইতি পড়ল দীর্ঘ বিতর্কে, টালবাহানায়। বিশ্ব জুড়ে ২০২০-কে বিদায় জানানোর তোড়জোড়ের মাঝেই বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে বেরিয়ে এল ব্রিটেন।
৩১ ডিসেম্বর রাতে লন্ডন শহরের ঐতিহ্যশালী বিগ বেনের কাঁটা ১১টা ছুঁতেই ইউরোপীয় দেশগুলির জোট থেকে ব্রিটেনের এই প্রস্থানের সঙ্গে সম্পূর্ণ হল ‘ব্রেক্সিট’ প্রক্রিয়া। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথায়, যার ফলে এ বার থেকে ‘অবারিত, উদার, দূরদর্শী, আন্তর্জাতিকতাবাদী এবং মুক্ত বাণিজ্যের’ দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে পরিচিতি বাড়বে ব্রিটেনের। মুহূর্তটিকে ‘অসাধারণ’ আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি ইইউ-এর সদর দফতর ব্রাসেলসের বেঁধে দেওয়া নিয়মের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ হয়ে ওঠা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশে এ দিন কোনও রাখঢাক রাখেননি প্রধানমন্ত্রী বরিস।
২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারিই ইইউ থেকে আইনত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ব্রিটেন। তবে ব্রাসেলসের সঙ্গে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি সই সংক্রান্ত আলোচনার জেরে প্রক্রিয়াটির চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছতে সময় লাগছিল। তবে সম্প্রতি সেই বাধা কাটিয়ে ওঠার পরে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হওয়ায় আর তেমন কোনও বাধা ছিল না।
বর্ষশেষের রাতেই ব্রেক্সিট পরিবৃত্তি শেষ হওয়ার ফলে ২০২১ সালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইইউ-এর কোনও নিয়মকানুনই আর ব্রিটেনের মাটিতে বলবৎ থাকল না। যার জেরে ২৭টি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং ব্রিটেনের নাগরিকদের মধ্যে মুক্ত যাতায়াত এ বার থেকে অতীত। ব্রিটেন থেকে আয়ারল্যান্ড ছাড়া বাকি দেশগুলিতে সফরের ক্ষেত্রে বদল ঘটল পাসপোর্ট এবং অভিবাসন নীতিরও।
তা ছাড়া, বেশ কয়েক দশক পরে শুল্ক নজরদারিও ফিরতে চলেছে ব্রিটেনের সীমান্তে। ফলে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির কারণে ইউরোপের কমপক্ষে ৪৫ কোটি উপভোক্তার কাছে ব্রিটেনের দরজা খোলা থাকলেও বাড়তি প্রশাসনিক কাগজপত্রের কাজ সামলে তাঁদের কাছে সংশ্লিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা পৌঁছে দিতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগবে বলেই মনে করছেন অনেকে ।
পোষ্যদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত নিয়ম বদলের পাশাপাশি এ বার থেকে ব্রিটেনের নাগরিকদের মহাদেশের অন্যত্র অবস্থিত বাড়িতে থাকার দিনও নিয়মে বেঁধে দেওয়া হবে। পরিবর্তিত নিয়মে বন্দরে পণ্য আটকে থাকার আশঙ্কাও রয়েছে। যার জেরে খাবার বা ওষুধে টান দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে বাড়ছে বেশ কয়েকটি সুবিধাও। যেমন ব্রিটেনের বাসিন্দাদের জন্য ফিরছে ডিউটি-ফ্রি শপিং।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় দেশগুলিকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যা থেকে ব্রিটেনই প্রথম বেরিয়ে এল। ২০১৬ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিস্তর রাজনৈতিক জলঘোলার জেরে এত দিন তা থমকে ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী পদে বরিসের আসার সঙ্গে তা ত্বরান্বিত হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরিয়ে আসা এই দিনটি ব্রিটেনের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন বরিস। বিরোধীদের মতে যদিও, এই পদক্ষেপ ব্রিটেনের পরিস্থিতির অবনতিরই সঙ্কেত।