Alauddin Khan

ছাইয়ের স্তূপে আলাউদ্দিনের প্রিয় সরোদ

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সাইদুল ইসলাম রেজবী বলেন, “আলাউদ্দিন খান তো নরেন্দ্র মোদীর আত্মীয় নন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি পুড়িয়ে অধর্মের কাজই করা হল।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২০
Share:

আলাউদ্দিন খানের পোড়া বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ভস্মের ঢিপির মধ্যে আধপোড়া কাঠের মতো মাথা উঁচু করে রয়েছে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খানের হাতের স্পর্শ পাওয়া সরোদটি। এক কোণে পড়ে আছে ডুগির হাঁড়ি, যার চামড়াটা পুড়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। মেঝে থেকে ছাদ ছোঁয়া লকলকে আগুন গিলে খেয়েছে সব কিছু। পুরনো বাড়ির পলেস্তারা খুলে দগদগে লাল ইট— যেন দগ্ধ কালো চামড়া জায়গায় জায়গায় উঠে রক্তলাল মাংস বেরিয়ে এসেছে। তার নীচে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন প্রবীণ সঙ্গীত প্রশিক্ষক ছবি ভট্টাচার্য। নিজের মনে তিনি বলে চলেছেন, “সঙ্গীত, সুর— এ-সব তো কারও ক্ষতি করে না! তবে সঙ্গীতের উপরে ওদের কেন এত রাগ?”

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে রবিবার থেকে টানা তিন দিন মৌলবাদীদের তাণ্ডব চলার পরে মঙ্গলবার প্রথম দেখতে আসা গেল পুরনো জেল রোডে উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ভিটেবাড়ি, যেটিকে মার্গসঙ্গীতের একটি দুর্লভ প্রদর্শশালা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। গেট খুলে ঢোকা মাত্র ধাক্কা। গোটা বাড়ির ভিতরে-বাইরে একটাই রং, মৌলবাদীদের চেতনার মতো— নিকষ কালো। পুরনো কাঠের টেবিল-চেয়ারের চুরমার টুকরো যেন আছড়ে মরে পড়ে রয়েছে। ঘরের মধ্যে ডাঁই করা ছাই আর ছাই। প্রতিষ্ঠানটির ছ’টি কক্ষের একটি জাদুঘর, তিনটি ক্লাসরুম, মুক্ত আলোচনার সরোদ মঞ্চ, প্রশাসনিক কক্ষ ও স্টোর রুমে থাকা বাদ্যযন্ত্র, চেয়ার-টেবিল এবং অন্যান্য আসবাব ভেঙে তছনছ করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

নিরাপত্তা প্রহরী সাজন সরকার বলেন, “প্রতিষ্ঠানের তিনটি গেট তালা দিয়ে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে উল্লাস করে। ঘরগুলোর কাঠামো ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। রাত পর্যন্ত আগুন জ্বলেছে।” মঙ্গলবার দিনভর বহু সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাংস্কৃতিক সংগঠক পুড়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড় গর্বের এই সঙ্গীতাঙ্গনটি দেখতে ছুটে এসেছেন।

Advertisement

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সাইদুল ইসলাম রেজবী বলেন, “আলাউদ্দিন খান তো নরেন্দ্র মোদীর আত্মীয় নন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি পুড়িয়ে অধর্মের কাজই করা হল।” প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক নাট্যব্যক্তিত্ব মনজুরুল আলম বলেন, “প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা অতি দুর্লভ আড়াইশো বই, আড়াই হাজার ছবি, দলিলপত্র, উস্তাদজির লেখা সঙ্গীতের পাণ্ডুলিপি, দুর্লভ ছবি, সঙ্গীতের যন্ত্রাদি নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হারমোনিয়াম, ১৯ জোড়া তবলা, সেতার, বেহালা, খঞ্জন, রবাব ও বিখ্যাত সরোদটি ছিল। অন্তত ৩৫ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “যারা মুক্ত চিন্তা ও শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চা পছন্দ করেন না, তাঁরাই এই হামলা চালিয়েছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement