প্রতীকী চিত্র। ছবি— রয়টার্স।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড টিকার ব্যবহার সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখল ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ড। কারণ ওই দেশগুলিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। যদিও ইউরোপের ওষুধের উপর নজরদারি করা সংস্থা এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছিল এই টিকা নিরাপদ। কিন্তু ইউরোপের এই তিনটি দেশের পদক্ষেপের পর এই টিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
প্রথম এই টিকার ব্যবহারের উপর স্থগিতাদেশ দেয় ডেনমার্ক। সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড টিকার নেওয়া ব্যক্তিদের রক্ত জমাট বাঁধার গুরুতর সমস্যার রিপোর্ট সামনে আসার পর এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, ‘এই পদক্ষেপ সতর্কতামূলক। টিকা নেওয়ার ঠিক কতটা সময় রক্ত জমাটের সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে টিকার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার সম্পর্ক রয়েছে’।
একই সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে অস্ট্রিয়ায়। সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা নেওয়ার কয়েক দিন পর ৪৯ বছরের এক নার্সের মৃত্যু হয় রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যায়। যে ব্যাচের টিকা নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে সেই ব্যাচের টিকার ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে সে দেশে। অস্ট্রিয়ার পাঠানো ওই ব্যাচের টিকার ডোজ পৌঁছেছিল এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লুক্সেমবার্গেও। এই চারটি দেশও ওই ব্যাচের টিকার ব্যবহার স্থগিত রেখেছে। একই কারণে টিকার ব্যবহারে স্থগিতাদেশ এনেছে আইসল্যান্ড এবং নরওয়েও।
ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) জানিয়েছে, ৯ মার্চ অবধি ইউরোপের প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২২টি ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা সামনে এসেছে। যদিও অস্ট্রিয়ায় নার্সের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ভূমিকা নেই বলে মনে করে ইএমএ। অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা দেওয়ার বন্ধ রাখার বিষয়টিকে ‘অতি সতর্ক’ পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক স্টিফেন ইভান্স এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘ইউরোপের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে এটা অতি সর্তকতামূলক পদক্ষেপ।’’ তাঁর মতে, ‘‘ঝুঁকি এবং সুবিধা দু’টো বিষয় তুলনা করলে টিকার ব্যবহারের পাল্লা এখনও ভারী রয়েছে।’’ তবে এই ঘটনা সামনে আসার পর টিকার ঝুঁকি তেমন নেই বলেই জানাচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। সুইডেনের এই সংস্থা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে বানিয়েছে এই টিকা। এক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে তাঁরা জানিয়েছে, ‘‘টিকার নিরাপত্তা নিয়ে তৃতীয় দফার ট্রায়ালে বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে। পিয়ার রিভিউ তথ্য টিকাকে সহ্য করার ক্ষমতা নিশ্চিত করেছিল।’’ ব্রিটেনও টিকাকরণের শুরু থেকে দেওয়া হচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ। তাঁরা মনে করে করে এই টিকা ‘নিরাপদ এবং কার্যকরী’।
ভারতে ব্যবহৃত কোভিশিল্ড টিকা সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হচ্ছে। এই টিকা আদতে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের এই সমস্ত রিপোর্ট সামনে আসার পর বিষয়টির উপর ‘তীক্ষ্ণ নজর’ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টিকাকরণের বিপ্রতীপ প্রভাব বিষয়ক কমিটির প্রধান নরেন্দ্র অরোরা। তাঁর কথায়, “কিছু দেশে এই টিকার সাময়িক স্থগিতাদেশের বিষয়ে আমরা অবহিত। কোভিশিল্ড নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি এবং রক্ত জমাট সম্পর্কিত বিষয়টির উপর আমরা নজর রাখছি।’’ যদিও এই টিকার ব্যবহার বন্ধের পথে যে ভারত হাঁটছে না তা-ও জানিয়েছেন তিনি।