ইরানি ফুটবলারদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে ইরান সরকার। ফাইল ছবি।
কাতারে ফিফা আয়োজিত ফুটবল বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া ইরানি ফুটবলারদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে ইরান সরকার, এমনটাই দাবি সংবাদমাধ্যম সূত্রে। মঙ্গলবার বিশ্বকাপে আমেরিকার বিরুদ্ধে খেলতে নামছে ইরান। সেই ম্যাচ চলাকালীন মাঠে ইরানি ফুটবলারদের আচরণের উপর নজর রাখবে সরকার। সরকার-বিরোধী আচরণ দেখলেই তাঁদের পরিবারকে ‘টার্গেট’ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ইরানে ফুটবলারদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার এবং অত্যাচারের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বকাপে ইরান প্রথম খেলতে নামে গত ২১ নভেম্বর। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ইরানি ফুটবলাররা দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে অস্বীকার করেন। জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন তাঁরা সকলে নীরব ছিলেন। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিস্তর চর্চা হয়েছে। অনেকের মতে, ইরান সরকারের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে এ ভাবেই বিশ্বমঞ্চে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইরানি ফুটবলাররা।
সূত্রের খবর, এর পরেই ইরানের জাতীয় দলের সব ফুটবলারকে নিয়ে বৈঠকে বসে ইরানিয়ান রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। সেখানে তাঁদের বলা হয়, আগামী ম্যাচে যদি তাঁরা জাতীয় সঙ্গীতের সময় নীরব থাকেন, বা তেহরান শাসনের বিরুদ্ধে কোনও রকম রাজনৈতিক প্রতিবাদ তাঁদের আচরণে ধরা পড়ে, তবে দেশে তাঁদের পরিবার বিপদে পড়বে। বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলেছে ইরান। সেই ম্যাচে ফুটবলাররা জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলেন। ২-০ গোলে জিতেওছে ইরান।
মঙ্গলবার তৃতীয় ম্যাচেও ইরানের ফুটবলারদের আচরণের উপর কড়া নজর রাখা হবে। ইরান থেকে যাঁরা কাতারে খেলতে গিয়েছেন, তাঁদের দলের বাইরে অন্য কারও সঙ্গে মেলামেশা করা নিষিদ্ধ। বিদেশিদের সঙ্গেও বেশি কথাবার্তা বলতে পারবেন না ইরানিরা, এমনটাই নির্দেশ রয়েছে। প্রতি মুহূর্তে ফুটবলারদের গতিবিধির উপর নজর রাখছেন ইরানের নিরাপত্তারক্ষীরা।
সূত্রের দাবি, ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ফুটবলারদের সমর্থনে ইরান সরকারের তরফে অনেক সমর্থক পাঠানো হয়েছে কাতারে। কিন্তু একই সঙ্গে ফুটবলারদের পরিবারকেও অত্যাচারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে সরকারের সমর্থন সবটাই ‘লোকদেখানো’ বলে দাবি করা হচ্ছে।
ইরানি তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকেই ইরানে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি। অভিযোগ, হিজাব না পরার কারণে মাহশাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পর পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পর ইরান সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। প্রতিবাদে পথে নামেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। বিশেষত মেয়েদের দেখা যায় চুল খুলে, প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে ফেলে প্রতিবাদ করতে। সেই থেকে দেশের বাইরে নানা আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ইরানিদের সরকার-বিরোধী প্রতিবাদে শামিল হতে দেখা গিয়েছে।