প্রতীকী ছবি।
উত্তর আমেরিকার গ্রেট প্লেন্স অঞ্চলের একটা পুঁচকে শহর, কাকতালীয় ভাবে যা আবার আমেরিকার শীতলতম ১০টি শহরের তালিকাতেও রয়েছে, সেখানে আমার বাস। তীব্র ঠান্ডার দাপট থাকলেও, গ্রীষ্মের শেষে ছোট্ট একরত্তি শরৎকাল আমাদের এখানেও আসে, সুন্দর ঝকঝকে নীল আকাশ, হাল্কা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া, গাছের রঙিন পাতা– এ সব নিয়ে। তবে এই শরতে না আছে কাশফুল, না শোনা যায় ঢাকের বাদ্যি, কারণ ত্রিসীমানায়, এমনকি গোটা নর্থ ডাকোটা প্রদেশে, একটিও দুর্গাপুজো হয় না!
এমন হাড় কাঁপানো ঠান্ডার জায়গায় গুটিকয় বাঙালি পরিবার থাকে। এখানে এসে প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলাম। তার পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, আমাদের নিকটবর্তী পুজো হয় পড়শি দেশ কানাডার উইনিপেগ শহরে, প্রায় ১৫০ মাইল দূ্রে! মানে কাছের পুজো এ দেশে নয়, একেবারে বিদেশে! আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ‘বিদেশের’ পুজো দেখতে যাওয়ার এই অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানিটা এড়াতে পারিনি।
২০১৯-এর কথা। আশ্বিনের এক রোদ ঝলমলে রবিবারের সকালে শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে সেজেগুজে বেরিয়ে পড়লাম দু’জনে। সে দিনটা ছিল অষ্টমী! এখান থেকে কানাডায় ঢোকার বেশ কয়েকটা ‘পয়েন্ট অব এন্ট্রি’ আছে, আমরা ঢুকি পেম্বিনা দিয়ে। যে কোনও সীমান্ত পেরোনোর সময়েই অভিবাসন দফতরের কিছু রুটিন প্রশ্ন থাকে— কোথায় ও কেন যাচ্ছি। এ প্রশ্নের উত্তরে সে দিন স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলাম, আমরা ভারতীয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছি আর সে দিন রাত্রেই ফিরে আসব। কানাডার সেই অফিসার দিদিমণিটি বেশ অবাক দৃষ্টিতে আমাদের বেশ কিছু ক্ষণ ধরে দেখলেন। বুঝলাম, এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে উনি হয়তো আগে কখনও এমন বেশভূষার মানুষ দেখেননি। তার পরে নিয়মের বেড়াজাল পেরিয়ে, ম্যাপ দেখে, রাস্তা চিনে উইনিপেগের হিন্দু মন্দিরে ম্যানিটোবার বাঙালি সংস্থা বিচিত্রার পুজোয় পৌঁছনোর পরে সেখানকার সদস্যদের থেকে যে আপ্যায়ন পেয়েছিলাম, তাতে সত্যি মন ভরে গিয়েছিল। সত্যি বলতে, প্রবাসের বড় পুজোগুলোয় এ রকম ছোঁয়া আগে কখনও পাইনি! মনস্থির করে ফেলেছিলাম, এ বার থেকে সুযোগ পেলে ওখানেই যাব পুজোয়।
তার পরে অতিমারি এসে পৃথিবীকে আমূল বদলে দিল! প্রয়োজনীয় কারণ ছাড়া আমেরিকা-কানাডা সীমান্ত দীর্ঘকাল বন্ধ! তবে আশার কথা, এ বার এ সব নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার সময় হয়েছে। আমরা হয় তো এ বারও সীমান্তের উত্তরে গিয়ে পুজো উপভোগ করতে পারব।