শেখ হাসিনা এবং মহম্মদ ইউনূস। — ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে কায়েদ-এ-আজম মহম্মদ আলি জিন্নাকে প্রথম বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার সরকারি নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে কার্জন হলে জিন্নার উপস্থিতিতেই ছাত্রছাত্রীরা আওয়াজ তুলেছিলেন— ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’।
মাতৃভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের সেই প্রথম বহিঃপ্রকাশই পরবর্তীকালে পাথেয় হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তান সেনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, বাঙালি সেনা আর আমজনতার মরণপণ লড়াই বদলে দিয়েছিল এশিয়ার মানচিত্র। জন্ম নিয়েছিল নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
পালাবদলের বাংলাদেশে সে সবই এখন অতীত। গত ৫ অগস্ট মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পর ভাঙা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি। দাবি উঠেছে, জিন্নাকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণার। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জিন্নার মৃত্যুদিনে উর্দু শের-শায়েরি-বক্তৃতা আয়োজন দেখেছে ঢাকা। এ বার একদা পাকসেনার গণহত্যার অপরাধের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামাবাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরাম সিন্ডিকেটের এক বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বরের ওই সিদ্ধান্ত সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
হাসিনার জমানায় ২০১৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, পাকিস্তান ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে টানা ন’মাস ধরে এ দেশে বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, এবং তা পরবর্তীকালে অস্বীকার করেছে। যত দিন না পাকিস্তান গণহত্যা এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করবে ততদিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠান কোনও ধরনের সম্পর্ক রাখবে না। তিনি জানান, নতুন করে ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষার্থী পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবে না। পাকিস্তানে কোনও পড়ুয়াকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের সুযোগ দেওয়া হবে না। সোমবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘‘এক সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছিল। আমাদের যে হেতু অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান, ফলে অনেকে স্কলারশিপ নিয়ে কিংবা কনফারেন্সে যোগ দিতে যেতে চায়। সেই বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা সভায় আলোচনা করে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’