প্রতীকী ছবি।
কাবুলের মানুষকে পানীয় জল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হল নয়াদিল্লি। রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী তথা ভারতকে ধন্যবাদ দিলেন ‘কাবুলিওয়ালা’ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। আজ ভিডিয়ো মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পরে কাবুল নদী অববাহিকায় শাহতুত বাঁধ নির্মানে চুক্তিবদ্ধ হল ভারত এবং আফগানিস্তান।
নতুন বছরে এই প্রথম দু’দেশের নেতা মুখোমুখি হলেও এই বাঁধ নিয়ে কথাবার্তা চলছে ছ’বছর ধরেই। গত বছর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কার্যত ঘোষণা করে দেন ২০২১-এ এ বিষয়ে চুক্তি সই হবে। আজ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালার গল্প পড়ে বড় হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘কাবুলিওয়ালাদের তরফ থেকে আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শাহতুত বাঁধের মাধ্যমে আমরা আবার নতুন করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারব। বাবরের কল্পনাকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে। এই জল ও ভ্যাকসিন উপহার দেওয়ার জন্য ভারত তথা নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ।’ অন্য দিকে নাম না করে পাকিস্তানের দিকে তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর কথায়, ‘ভারত এবং আফগানিস্তান উভয় দেশই চায় হিংসামুক্ত পরিবেশ। আফগানিস্তানে হিংসার ঘটনা বাড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা কাবুলের পাশে রয়েছি। কাপুরুষের মতো আফগানিস্তানকে নিশানা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসের মোকাবিলায় আমরা একজোট। আফগানিস্তানকে ‘মজবুত কৌশলগত মিত্র’ হিসাবেই বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি আফগানিস্তানে পাঠানো হয়েছে ৫ লক্ষ প্রতিষেধকের ডোজ। এ দিন মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে আশরফ গনি বলেন, ‘আমাদের ৫ লক্ষ ডোজ প্রতিষেধক দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছেন, কঠিন সময়ে তার থেকে ভাল উপহার আর হতে পারে না।’
শাহতুত বাঁধ নিয়ে এর আগেই স্বর তুলেছে ইসলামাবাদ। কিন্তু বিষয়টিকে আদৌ আমল দেয়নি নয়াদিল্লি। কাবুল নদী উপত্যকায় দিল্লি এই বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হলে যে ইসলামাবাদ বাদ সাধবে, এটা অজানা ছিল না সাউথ ব্লকের কাছে। তবু দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সার্বিক ভূকৌশলগত পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারত এই সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। এর ফলে প্রথমত আফগানিস্তানের আশরফ গনি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভাল করা সম্ভব হবে। কৌশলগত ক্ষেত্রে বাড়বে নয়াদিল্লির প্রভাব। দ্বিতীয়ত, দোহায় তালিবানের সঙ্গে গনি সরকারের যে শান্তি আলোচনা চলছে, তাতে হস্তক্ষেপ করে নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রবল চেষ্টা করছে পাকিস্তান। প্রায় সাড়ে ছ’হাজার জঙ্গিকে কাবুলমুখী করে তালিবানের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর রাস্তায় হাঁটছে পাক সরকার, এমনই খবর। আবার জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমেরিকার নতুন কাবুল-নীতির প্রভাব ভারতের উপর পড়বে বলেই মনে করছে দিল্লি। তাই আগে থেকেই কাবুলে নিজেদের উন্নয়নকামী মুখকে আন্তর্জাতিক প্রচারে আনতে চাইছে মোদী সরকার।