চলতি বছরে আমাজনের ১০ লক্ষ ৭ হাজার একর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর আমলে আমাজনের বৃষ্টি-অরণ্যে প্রকৃতি ধ্বংসের মাত্রা ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সোমবার সে দেশের সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্যই জানা গিয়েছে। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আমাজনে ধ্বংসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.৫ শতাংশ বা ১১,০৮৮ বর্গ কিলোমিটার।
আমাজনের অরণ্যে গাছ কেটে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার বোলসোনারোর নীতিই যে এর জন্য দায়ী, সে দাবি করেছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। তবে বোলসোনারো সরকার একে প্রকৃতি ধ্বংসের লড়াইয়ে অগ্রগতির লক্ষণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
আমাজনের ৬০ শতাংশ বনভূমি ব্রাজিলের অন্তর্গত। ৬৭ কোটি হেক্টর বা ২ কোটি ৬০ লক্ষ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই অরণ্যকে অনেকেই ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে আখ্যা দেন। তবে চলতি বছরে আমাজনের ১০ লক্ষ ৭ হাজার একর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যা লন্ডন শহরের থেকে প্রায় সাত গুণ বেশি। এই তথ্য জানিয়েছে ব্রাজিলের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইনপে।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কেটেছে, করোনা নিয়ে মুখ খুলছে উহান
ইপে জানিয়েছে, গত বছরের অগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতেই এই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। আমাজনে গ্রীষ্মের মরসুম শুরুর সময় আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় সেই সময়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যাতে নির্ভুল পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।
এই মাত্রায় আমাজনের অরণ্য ধ্বংস হওয়ার জেরে ২০০৯ সালের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী বিপাকে পড়তে পারেন বোলসোনারো সরকার। ওই আইনের আওতায় ব্রাজিল সরকারের লক্ষ্য ছিল, আমাজনের অরণ্য ধ্বংস মোটামুটি ভাবে ৩ হাজার ৯০০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। তবে, সে লক্ষ্যপূরণে একেবারেই ব্যর্থ ব্রাজিল সরকার। লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হলে কী পরিণাম হতে পারে, তা নিয়ে ওই আইনে বিশদে বলা না থাকলেও সে জন্য বোলসোনারোর সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন: বাটা-র গ্লোবাল সিইও পদে প্রথম ভারতীয়, ১২৬ বছরে এই প্রথম
আমাজন ধ্বংসের পিছনে বোলসোনারোর পরিবেশ সংক্রান্ত তথা আর্থিক নীতিও দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে। ক্ষমতায় আসার পর পরিবেশ বাঁচানোর জন্য বিশেষ নজরদারি নেই ব্রাজিল সরকারের, এই অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, দেশ থেকে দারিদ্র দূরীকরণে আমাজনের বনভূমিতে গাছ কেটে বাণিজ্যিক ভাবে চাষবাস এবং খননকাজের অনুমতি দিয়েছেন বোলসোনারো। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এতে আমাজনের বেআইনি খনন বাড়বে। উৎসাহিত হবেন ভূমিদখলকারীরা। যদিও একে উন্নয়নের তকমা দিয়েছে ব্রাজিল সরকার। বোলসোনারো ক্ষমতার আসার পর ২০১৮ সালে ৭ হাজার ৫৩৬ বর্গ কিলোমিটার সবুজ ধ্বংস হয়েছে। তবে সরকার পক্ষ এই পরিসংখ্যানকে উন্নয়নের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যামিল্টন মউরাও বলেন, “এই পরিসংখ্যান নিয়ে অবশ্যই উল্লসিত নই। তবে এর থেকে বোঝা যায় যে আমাদের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হতে শুরু করেছে।”
ব্রাজিল সরকার একে উন্নয়নের ফসল বলে আখ্যা দিলেও আমাজনে সবুজ-নিধন নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বোলসোনারোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিশ্বনেতারা। বোলসোনারোর কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর অভিযোগ, আমাজনকে বাঁচাতে যথেষ্ট তৎপর নয় ব্রাজিল সরকার। অন্যদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার আগে একটি বিতর্কসভায় জো বাইডেন দাবি করেছিলেন, আমাজনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বিশ্বনেতাদের উচিত ব্রাজিলকে অর্থসাহায্য করা। তবে বাইডেনের ওই মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ বোলসোনারো একে ব্রাজিলের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। বাইডেনের জয়ের পর এ নিয়ে ব্রাজিলের উপর আমেরিকা চাপ বাড়াবে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।