ফাইল চিত্র।
শীর্ষ পেরিয়ে এ বার ব্রিটেনেও নিম্নমুখী ওমিক্রন-সংক্রমণের রেখচিত্র। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক স্ট্রেন ওমিক্রনের তাণ্ডব জটিল কিন্তু সংক্ষিপ্ত অধ্যায়। যা অতিমারি শেষ হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আশাবাদী তাঁরা। গত কাল একই সংবাদ মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও। ছ’সপ্তাহ ধরে ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা সংক্রমণ এই প্রথম নিম্নমুখী সে দেশেও।
একেবারে আকস্মিক নয় এ ঘটনা। বিশেষজ্ঞেরা শুরু থেকেই বলেছেন, যে গতিতে ওমিক্রন ছড়িয়েছে, সে গতিতেই কমবে অসুখ। কার্যত, এর মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ ক্ষমতায় দেড় মাসেই হার্ড ইমিউনিটি (গোষ্ঠীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা) তৈরি হতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে। বিজ্ঞানীর জানাচ্ছেন, ব্রিটেনের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শুধু এ দেশেই নয়, আমেরিকাতেও একই পথ অনুসরণ করছে ওমিক্রন। যে গতিতে সংক্রমণ বেড়েছিল, সেই গতিতেই কমছে এটি।
সাত দিনের গড় দৈনিক সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে ব্রিটেনে। গত মঙ্গলবার দৈনিক সংক্রমণ গত দু’সপ্তাহের গড়ের থেকে কম ছিল। নভেম্বরের পরে এত কম দৈনিক সংক্রমণ দেখা যায়নি। একটি প্রথম সারির আমেরিকান দৈনিকেও লেখা হয়েছে, অ্যাক্টিভ কোভিড রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ডে কোভিড-রোগী ভর্তির সংখ্যাও কমেছে। বিশেষ করে লন্ডনে। ওমিক্রনের প্রভাব মারাত্মক ভাবে পড়েছিল এ শহরে।
গত বছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ওমিক্রন স্ট্রেন প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তার পরেই এটি ধরা পড়ে ব্রিটেনে, ২৭ নভেম্বর। এক মাসের মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ২ লক্ষ ছাড়িয়েছিল। আমেরিকার পরিস্থিতি আরও ভয়ানক ছিল। সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ রেকর্ড রয়েছে আমেরিকার। এক দিনে ১৩ লক্ষ মানুষের কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়েছে। বর্তমানে এ দেশেও সংক্রমণ কমছে। আশার আলো দেখাচ্ছেন আমেরিকান সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরি পরিস্থিতি বদলে যাবে, তবে ভালর দিকে।
আমেরিকায় ওমিক্রনের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল নিউ ইয়র্ক শহর। নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল জানিয়েছেন, দিনে যে সংখ্যক কোভিড পজ়িটিভ রিপোর্ট দেখা যাচ্ছিল, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছিল, এ বার তা কমতে দেখা যাচ্ছে।
অনেকেই মনে করছেন, শুধু ওমিক্রন নয়, অতিমারিই শেষের পথে। তবে সে জবাব দিতে পারে একমাত্র সময়। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওমিক্রনের প্রভাব কমলেই আগের ছন্দে ফিরবে জীবন। করোনার কড়াকড়ি চালিয়ে যাওয়া হবে না। বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থাও বহাল রাখা হবে না।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতর এ-ও ঘোষণা করেছে, তারা নিশ্চিত, করোনার অন্যান্য স্ট্রেনের তুলনায় ওমিক্রন কম শক্তিশালী ভেরিয়েন্ট। মৃত্যুর আশঙ্কা বিচার করেই এই পর্যালোচনা তাদের। তবে একই সঙ্গে তারা এ-ও দাবি করেছে, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেকটাই শক্তি জুগিয়েছে কোভিডের ভ্যাকসিন।
শুক্রবার ৯৯,৬৫২ জনের কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়েছে ব্রিটেনে। গত সপ্তাহের থেকে ২৯.৫ শতাংশ কম। তবে এর বিরুদ্ধ-মতও আছে। ব্রিটিশ অধ্যাপক কেভিন ম্যাকনওয়ের কথায়, ‘‘অনেকের উপসর্গ নেই। ফলে তাঁরা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। কিন্তু তাঁরা অন্যের সংস্পর্শে এসে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। এই উপসর্গহীন লোকজনকে দৈনিক সংক্রমণে যোগ করা হচ্ছে না।’’ অনেকে বলছেন লন্ডনে সংক্রমণ কমলেও ব্রিটেনের কিছু কিছু জায়গায়, যেমন নর্থ ওয়েস্ট, ইয়র্কশায়ারে সংক্রমণ বেড়েছে। ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিক সুজ়ান হপকিন্স তাই বলছেন, ‘‘মাস্ক পরে যেতে হবে। লোকজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ, মেলামেশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোনও উপসর্গ লক্ষ করলেই বিচ্ছিন্নবাসে যেতে হবে। এবং সেই সঙ্গে অবশ্যই করাতে হবে করোনা পরীক্ষা।’’