ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বাংলাদেশে। ফাইল চিত্র।
শক্তি বাড়িয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। আগামী ১২ ঘণ্টায় আরও শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রবিবার রাত থেকেই বইছে ঝোড়ো হাওয়া। কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় মঙ্গলবার ভোরে বরিশালের কাছে তিনকোনা ও সন্দ্বীপের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে।
সে দেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ সূত্রে খবর, সোমবার গভীর রাতে সাতক্ষীরা উপকূল থেকে বরিশাল উপকূলে আঘাত হানতে পারে সিত্রাং। সন্ধ্যার পর জলোচ্ছ্বাস শুরু হতে পারে। চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা, ঝালকাঠি, নোয়াখালি, ফেনির নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরে পাঁচ থেকে আট ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। অতিক্রম করার সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, ফেনি, চট্টগ্রাম উপকূলে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাতেও বৃষ্টি চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি ও হাওয়ার বেগ বাড়তে পারে।
সোমবার সকাল থেকেই খুলনায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। রবিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। দুর্যোগের জেরে নদীবাঁধে ভাঙন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা এলাকার প্রায় ১৫ কিমি নদীর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি কয়রা উপজেলার প্রায় ১০ কিমি বাঁধেও ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দুর্যোগের কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলেছে পটুয়াখালি নদীবন্দর। ওই নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতিতে সব নৌপথে ৬৫ ফুটের ছোট লঞ্চ-সহ সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
হাতিয়াতেও বইছে ঝোড়ো হাওয়া। হাতিয়া উপজেলার ২৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৩ হাজার ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, তিন কারণে সিত্রাঙের প্রভাব বেশি হতে পারে। তিন কারণ হিসাবে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের কথা বলেছেন বাংলাদেশের আবহবিদ আবদুল মান্নান। তাঁর কথায়, বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়, যা জলভাগের উপর চাপ তৈরি করে।