নয়া ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রিটেন? সব ঠিক থাকলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। ঋষির ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লে, তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসবেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার ৪৫ দিনের মাথায় লিজ় ট্রাসের ইস্তফার পর আবার চর্চায় এসেছে ঋষির নাম। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ও কনজ়ারভেটিভ দলের নেতা হওয়ার দৌড়ে ঋষির পাশাপাশি শামিল হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পেনি মরড্যান্ট।
কিন্তু সেই দৌড় থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন জনসন। প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে কনজ়ারভেটিভ পার্টির ১০০ জন এমপির সমর্থন প্রয়োজন। সূত্রের খবর, ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ১৪২ জন এমপিই ঋষিকে সমর্থন জানিয়েছেন। মরড্যান্টকে সমর্থন জানিয়েছেন ২৯ জন এমপি। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টোর আগে ১০০ জন টোরি এমপির সমর্থন যদি না পান মরড্যান্ট, তা হলে ঋষির জয় সুনিশ্চিত।
বরিস জনসনের ইস্তফার পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়েও শামিল হয়েছিলেন ব্রিটেনের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সুনক। কিন্তু সে বার চূড়ান্ত পর্যায়ে লিজ় ট্রাসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। সেই পরাজয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই আবার ব্রিটেনের কুর্সিতে বসার দৌড়ে শামিল হয়ে এ বার বাজিমাত করতে পারেন সুনক।
ব্রিটেনের রাজনীতিতে কয়েক বছর ধরেই চর্চায় রয়েছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাইকে ঘিরে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। যে সব ব্যক্তি ব্রিটেনের বাইরের বাসিন্দা কিন্তু পেশা সূত্রে ব্রিটেনে রয়েছেন, তাঁদের সে দেশের সরকারকে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। ‘প্রভাব খাটিয়ে’ সেই কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে ঋষি-ঘরনি অক্ষতার বিরুদ্ধে।
কিভে মস্কোর আগ্রাসনের পর রাশিয়া থেকে আয় হয় এমন ব্যবসাগুলি প্রশ্নের মুখে পড়ে। ব্রিটেনের প্রথম সারির রাজনীতিবিদ হওয়ার সুবাদে স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগের তির ছিল ঋষির দিকে। তবে এই অভিযোগ পরে অস্বীকার করেন ঋষি। বিতর্ক থাকলেও তাতে খুব একটা আমল দেননি তিনি।
সাউদাম্পটনে থাকত তাঁর পরিবার। ১৯৮০ সালের ১২ মে সেখানেই ঋষির জন্ম। আফ্রিকান হিন্দু পঞ্জাবি পরিবারে বেড়ে ওঠা তাঁর।
হ্যাম্পশায়ার ও উইনচেস্টার কলেজে স্কুল জীবন শেষে অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে ২০০১ সালে স্নাতক হন তিনি। পরে ২০০৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ নিয়ে পড়াশোনা করেন ঋষি। সেখানেই স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়।
২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে অক্ষতার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ঋষি।
২০১৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ঋষি। সে বছর রিচমন্ড থেকে কনজ়ারভেটিভ পার্টির হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন।
ব্রিটেনের বিত্তবানদের মধ্যে অন্যতম ঋষি। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ জানলে চোখ কপালে উঠবে! সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ঋষি ও তাঁর স্ত্রীর অক্ষতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি।
মধ্য লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে ঋষির। একাধিক সুযোগসুবিধা রয়েছে সেই বাড়িতে। জানা গিয়েছে, সুনকের বাড়িতে রয়েছে পাঁচটি বেডরুম। এছাড়াও রয়েছে চারটি স্নানঘর। রয়েছে বিশাল বাগানও।
ঋষির এই বিলাসবহুল বাড়ির দামও আকাশছোঁয়া। যে বাড়িটি প্রায় ৪২ কোটি টাকা দামে কিনেছিলেন ঋষি-অক্ষতা। বর্তমানে এই বাড়ির দাম ৬৫ কোটি টাকারও বেশি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির কাছেই রয়েছে সুনকের বাড়ি। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বাড়িটি নবরূপে সাজানো হয়েছিল। শোনা যায়, স্ত্রীর মনের মতো করেই সাজানো হয়েছে ঋষির বাড়ি।
লন্ডনের ওল্ড ব্রম্পটন রোডে দক্ষিণ কেনসিংটনে আরও একটি বাড়ি রয়েছে ঋষির। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এই বাড়িতে যান ঋষি ও অক্ষতা। এছাড়াও নর্থ ইয়র্কশায়ারে ঋষির খামারবাড়িও রয়েছে। এই বাড়িটিও অত্যন্ত বিলাসবহুল।