ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। আগামী ১২ ঘণ্টায় আরও শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে সিত্রাং। এর পর আরও উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে সাগরদ্বীপ থেকে ৪৩০ কিমি দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়।
মঙ্গলবার ভোরে বাংলাদেশের বরিশালের কাছে তিনকোনা ও সন্দ্বীপের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে এই ঘূর্ণিঝড়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৫৮০ কিমি দূরে রয়েছে সিত্রাং।
রবিবার রাতেই অতি গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। তার পর থেকেই আবহাওয়ার বদল ঘটেছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। ভোররাত থেকেই দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কালীপুজোয় রাজ্যের আকাশে দুর্যোগের মেঘ। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টির জেরে আলোর উৎসবের উচ্ছ্বাস ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বেলা গড়ালে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। ফলে সন্ধ্যায় আতশবাজি পোড়ানোর আনন্দ মাটি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার ও মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে।
সোমবার দুই ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
সোমবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সন্ধ্যা ও রাতের দিকে হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ কিমি।
কালীপুজোর দিন কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়ার বেগও বাড়বে। হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিমি।
মঙ্গলবার দুই ২৪ পরগনা, নদিয়ায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার ঝড়ের বেগ আরও বাড়তে পারে। দুই ২৪ পরগনায় ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিমি।
মঙ্গলবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিমি।
মঙ্গলবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিমি।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হবে সমুদ্র। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দুই ২৪ পরগনা। বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরেও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে পড়তে পারে কাঁচা বাড়ি। বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়তে পারে। কাঁচা রাস্তার ক্ষতি হতে পারে।
সুন্দরবন এলাকায় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির সময় নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও ভারী বর্ষণের জেরে নিচু এলাকায় জল জমতে পারে। শাকসবজি ও ফসল নষ্টের আশঙ্কা করা হয়েছে।
সুন্দরবন এলাকায় ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর বকখালি এলাকায় পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকেই দিঘায় উত্তাল সমুদ্র। পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। চলছে নজরদারি।
উপকূলবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে মাইকে প্রচার করছে প্রশাসন। ঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত কলকাতা পুরসভাও।
আগাম সতর্কতা হিসাবে উপকূলবর্তী জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিকে আশ্রয় শিবির হিসাবে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। মূলত সমুদ্র উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিত্রাং নামটি তাইল্যান্ডের দেওয়া। উচ্চারণ অনুযায়ী, ‘সি-তরাং’। সিত্রাং আসলে তাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি পদবি।
ভিয়েতনামের ভাষায় এর অর্থ পাতা। ২০২০ সালে আবহাওয়া দফতরের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় সিত্রাং।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সোমবার ভোর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দুর্যোগের ঘনঘটা থাকবে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ঝড়বৃষ্টির দাপট ধীরে ধীরে কমবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে যে, বুধবার থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বৃহস্পতিবার আবার রোদ ঝলমলে আকাশ দেখা যাবে।
তবে বাংলাদেশের দিকে ঘূর্ণিঝড় ঘুরলেও এ রাজ্যের তিন জেলা, অর্থাৎ দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে শেষ পর্যন্ত কতটা তাণ্ডব চালাবে সিত্রাং, সেই আতঙ্কেই কাঁপছেন ওই তিন জেলার বাসিন্দারা।