ভরসা কেবল নারকেল। তাই দিয়েই মিটেছে খিদে এবং তেষ্টা, দুইই। এ ভাবেই বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ‘অ্যাঙ্গিলা কে’ অঞ্চলের পাণ্ডববর্জিত দ্বীপে সম্প্রতি ৩৩ দিন কাটালেন কিউবার ৩ নাগরিক। আরও এক বার সাহিত্যের পাতা থেকে বাস্তবে উঠে এল ‘রবিনসন ক্রসো’, ‘সুইস ফ্যামিলি রবিনসন’ অথবা ‘অ্যাড্রিফ্ট ইন দ্য প্যাসিফিক’-এর রোমাঞ্চ। (প্রতীকী চিত্র)
বাহামায় এই ৩ দ্বীপবাসীর অস্তিত্ব ধরা পড়ে আকাশপথে উপকূলরক্ষীদের নিয়মমাফিক নজরদারির সময়ে। উপকূলরক্ষী রিলে বিচের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাহামা দ্বীপপুঞ্জের উপরে আকাশপথে নজরদারির সময়ে তাঁর নজরে কিছু একটা আটকে যায়।
সন্দেহ নিরসনে তিনি হেলিকপ্টার নিয়ে আরও কিছুটা নীচে নেমে আসেন। সে সময়েই বুঝতে পারেন জনশূন্য দ্বীপে কেউ বিপদে পড়েছেন।
কিন্তু সে সময় উপকীলরক্ষী বাহিনীর ওই নজরদারির দলের কাছে উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিল না। কিন্তু আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কপ্টার থেকে প্যারাশুটের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয় খাবার, জল এবং একটি রেডিয়ো। যাতে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন।
যোগাযোগ তো হল। কিন্তু সেখানে ভাষার বাধা। দ্বীপে আটকে পড়া দুর্গতরা আর্তি জানাচ্ছেন স্প্যানিশে। এ দিকে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর নজরদারির ওই দলে স্প্যানিশে দক্ষ সে রকম কেউ নেই। শেষ অবধি বিচের তাঁর ভাঙা ভাঙা স্প্যানিশের জ্ঞান নিয়ে বিচের বুঝতে পারলেন কেউ ওই দ্বীপে আটকে পড়েছেন।
কিউবা এবং আমেরিকার ফ্লোরিডার মাঝে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অংশ ছোট্ট দ্বীপ এই ‘অ্যাঙ্গিলা কে’। সেখানেই আটকে পড়েছিলেন দু’জন পুরুষ এবং এক জন মহিলা। তাঁরা জানান, নৌকাডুবির পরে সাঁতার কেটে তাঁরা দ্বীপে উঠেছিলেন।
জনশূন্য ওই দ্বীপে নারকেল গাছ এবং কিছু গুল্মজাতীয় ঝোপঝাড় ছাড়া বিশেষ কোনও গাছ নেই। বাধ্য হয়েই তাই এক মাসের বেশি কিছু সময় নারকেলেই জীবনধারণ করেছিলেন ওই ৩ জন। (প্রতীকী চিত্র)
তবে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, নারকেলের পাশাপাশি ইঁদুর এবং শামুক দিয়েও ক্ষুন্নিবৃত্তি করেছেন তাঁরা। থাকার জন্য দ্বীপে বানিয়েছিলেন অস্থায়ী ছাউনিও। (প্রতীকী চিত্র)
উদ্ধারকারীদের নজর টানবার জন্য একটি পতাকা বানিয়ে পুঁতে রেখেছিলেন দ্বীপে। সেই পতাকা দেখেই উপকূলরক্ষীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
শেষ অবধি তিন জনকে এয়ারলিফ্ট করে উদ্ধার করা হয়। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় ফ্লোরিডার চিকিৎসাকেন্দ্রে। শারীরিক পরীক্ষার পরে চিকিৎসকরা জানিযেছেন, ৩ জনের দেহে আঘাত গুরুতর নয়। (প্রতীকী চিত্র)
আমেরিকার উপকূলরক্ষীবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, শারীরিক পরীক্ষার পরে উদ্ধার হওয়া ৩ জনকে পাঠানো হয়েছে অভিবাসন বিভাগে। উপকূলরক্ষীবাহিনীর তরফে দাবি করা হয়েছে, এ রকম ঘটনা তাঁদের কাছে নতুন। (প্রতীকী চিত্র)
কেন ওই ৩ কিউবান সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিলেন? তাঁদের উদ্দেশ্য কি ছিল সমুদ্রে নিছক মাছধরা? নাকি, আমেরিকায় অনুপ্রবেশের জন্যই জলপথে ভেসে পড়েছিলেন? সে রহস্যের সমাধান এখনও হয়নি। (প্রতীকী চিত্র)