ফাইল চিত্র।
ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে ভাবে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তার কঠোর নিন্দা করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় হাসিনা এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘পশ্চিমি দুনিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলেও মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশও চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে পড়েছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশে একের পর এক এনকাউন্টারের ঘটনার নিন্দা করে কিছু দিন আগে বাংলাদেশ পুলিশ ও বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন)-এর এক ঝাঁক কর্তার আমেরিকায় ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাইডেন প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর আগে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের জেলে ভরে রাখা বা তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার নিন্দা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে হাসিনা যখন পদ্মা সেতু ও ঢাকার মেট্রো রেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশবাসীকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, পশ্চিমি দুনিয়ার নিরন্তর মানবাধিকার-খোঁচা তাঁকে অস্বস্তিতে রেখেছে। এ দিন তাই রাশিয়ার উপরে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে চাপানো নিষেধাজ্ঞাকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা চাপ দেওয়ার কৌশল নিলেন হাসিনা। এ দিন তিনি বলেন, “রাশিয়ার উপরে স্যাংশান (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে তারা গোটা বিশ্বের মানুষকে শাস্তির মুখে ফেলে দিয়েছে।” হাসিনা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, পশ্চিমি দেশগুলি রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোয় বিশ্ব জুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। জ্বালানি তেল পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মুল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। জ্বালানি সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার খবর আসছে। হাসিনা বলেন, “এ ভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়া— এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনে অবিলম্বে সামরিক আগ্রাসন থামানোর দাবি করে আনা প্রস্তাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশও ভোটদানে বিরত ছিল। পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানবিক সাহায্য প্রদান এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরুর আর একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশ। পরে সংসদে এই দুই কাজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হাসিনা বলেছিলেন, “অন্য পক্ষের উস্কানি ছাড়া এই কোভিডের সময়ে রাশিয়া একতরফা যুদ্ধ করতে গিয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কাজেই এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে একতরফা দায়ী করে আনা প্রস্তাবে আমরা ভোট দিইনি। দ্বিতীয় প্রস্তাবটির ভাষা অন্য। এখানে মানবিক সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বলেই আমরা ভোট দিয়েছি।”