করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে হু। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
বিশ্ব জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যাও। তাই পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেই আত্মসন্তুষ্টির মনোভাব দেখানো উচিত নয়। বরং সতর্ক থাকা উচিত। নোভেল করোনা নিয়ে এবার এমনই সতর্কবার্তা দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাদের দাবি, ইউরোপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে এগোলেও, গোটা বিশ্বে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে চিনেই প্রথম থাবা বসিয়েছিল নোভেল করোনাভাইরাস। তার পর থেকে গত পাঁচ মাসে গোটা বিশ্বে অতিমারির আকার নিয়েছে করোনা। মঙ্গলবার পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৫৪-তে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ঠেকেছে ৪ লক্ষ ৬ হাজার ৫৪০-এ।
এর মধ্যে আমেরিকার পরিস্থিতিতই সবচেয়ে ভয়াবহ। পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপ ছাড়িয়ে আমেরিকা এখন কার্যত করোনার ভরকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ১৯ লক্ষ ৬১ হাজার ১৮৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ৭ জন। এই পরিস্থিতিতেই কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনে নেমেছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড মৃত্যু, দেশে করোনায় আক্রান্ত ২.৬৬ লক্ষ
এতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হু প্রধান টেড্রোস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস। জেনিভা থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, বিশ্ব জুড়ে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ১০ দিনের হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, ৯ দিনেই ১ লক্ষের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’’
শুধুমাত্র রবিবারই নতুন করে ১ লক্ষ ৩৬ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জানান হু প্রধান, এক দিনে আক্রান্তের নিরিখে এখনও পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ। নতুন করে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া-সহ ১০টি দেশের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
আমেরিকার পরিস্থিতি নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেন গেব্রিয়েসাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোথাও পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেই আত্মসন্তুষ্টি দেখা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে। এটাই সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের কারণ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই যে কোনও মুহূর্তে করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন। তাই ছ’মাসের বেশি সময় ধরে যখন অতিমারি নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে আসা হচ্ছে, এটা তা থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে সঠিক সময় নয়।’’
আরও পড়ুন: প্রবল ভোগান্তি নিয়েই অফিসে সরকারি কর্মীরা
তাই জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সমর্থন করলেও তা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনেই করতে হবে মত গেব্রিয়েসাসের। তাঁর কথায়, ‘‘সমানাধিকারের দাবিকে সমর্থ করে হু। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলেনও সমর্থন রয়েছে আমাদের। কোনও ধরনের বৈষম্যকেই সমর্থন করি না আমরা। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের নিরাপদে থাকতে বলব। পরস্পরের থেকে যতটা সম্ভব, অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। হাত পরিষ্কার রাখুন। কাশি হলে মুখ ঢাকুন। প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।’’
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সংক্রমিত কারও সংস্পর্শে এলে, স্থানীয় প্রশাসনকেই তাঁদের চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান হু-র জরুরি বিভাগের ডিরেক্টর মাইকেল রায়ান। বিক্ষোভে না গিয়ে অসুস্থদের বাড়িতে থাকার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি।