Coronavirus

ভরসা নেই মার্কিন স্বাস্থ্য পরিষেবায়, ভয় পাচ্ছি তাতেই

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও অনেকের বাড়িতে বসে কাজ বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় অর্ধেক শহরই ‘গৃহবন্দি’। 

Advertisement

সাগ্নিক দাস

নিউ ইয়র্ক (আমেরিকা) শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

হাইওয়েতে করোনা সতর্কতা।—ছবি রয়টার্স।

প্রথম যখন খবর পেলাম চিন থেকে, ইউরোপ হয়ে, অতলান্তিক মহাসাগর পেরিয়ে আমেরিকায় পদার্পণ করেছে ‘শ্রীযুক্ত করোনা’, বিশেষ পাত্তা দিইনি। বদনাম বলুন বা সুনাম, নিউ ইয়র্ক সম্পর্কে বলা হয়, কোনও কিছু নিয়েই খুব বেশি মাথা না-ঘামিয়ে নিজের গতিপথ ধরে এগিয়ে চলে এই শহর। শুনেছি, ২০০১-র ১১ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ জঙ্গি হামলা দেখার পরেও কিছু দিন বাদে নিজের ছন্দে ফিরে এসেছিল নিউ ইয়র্ক। ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে আমি নিউ ইয়র্কে আসি। সেই সেপ্টেম্বরেই এখানকার চেলসি মার্কেট কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণে। তখনও দেখেছি, বিস্ফোরণ সত্ত্বেও শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় উদ্দাম পার্টি চলেছে।

Advertisement

এই কিছুই পরোয়া না-করা নিউ ইয়র্ককে প্রথম ভয় পেতে দেখলাম গত সপ্তাহে। আর পাঁচ জন নিউ ইয়র্কবাসীর মতন আমাকেও যাতায়াত করতে হয় গণপরিবহণেই। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে যে ভুগতে শুরু করেছেন এ শহরের মানুষজন, তা টের পেলাম মেট্রোয় যাতায়াত করবার সময়ে। সকলের চোখে-মুখেই যেন একটা চাপা উৎকণ্ঠা। ট্রেনের কামরায় কেউ কাশলে বা হাঁচলে সবাই কেমন যেন চমকে উঠছে। অনেকেই মুখোশ পরে ঘুরছেন। দশ দিন ধরে দশটা দোকানে হ্যান্ড-স্যানিটাইজ়ার খুঁজেছি, পাইনি। শুনলাম, সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জায়গায় জায়গায় হ্যান্ড-স্যানিটাইজ়ারের বোতল রাখা রয়েছে। তা ছাড়া, কী ভাবে কাশতে হবে, কী ভাবে হাঁচতে হবে, কী ভাবেই বা হাত ধুতে হবে, সেই নিয়ে নানা নির্দেশিকা-পোস্টার টাঙানো রয়েছে সর্বত্র। গত সোমবার যখন বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছি, দেখলাম কয়েক দিন আগের থেকে তুলনামূলক ভাবে রাস্তাঘাট অনেক ফাঁকা। অফিসটাইমের মেট্রোও বেশ ফাঁকা। ব্রুকলিন কলেজে শিক্ষকতা করতে যেতে হয়। সেখানেও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা টের পাচ্ছিলাম। কয়েক জন পড়ুয়া তো সরাসরি বলেই দিলেন যে তাঁরা ক্লাস করতে আসতে ভরসা পাচ্ছেন না। তার পরে গত বুধবার নিউ ইয়র্ক প্রদেশের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমা ঘোষণা করলেন— নিউ ইয়র্কের সমস্ত সরকারি স্কুল-কলেজ এই সিমেস্টারের জন্য বন্ধ থাকবে। সব কিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে পড়ানো হবে। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও অনেকের বাড়িতে বসে কাজ বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় অর্ধেক শহরই ‘গৃহবন্দি’।

তার পরের দিন অর্থাৎ ১৩ই মার্চ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোটা দেশে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করলেন। যদিও এটা প্রত্যাশিতই ছিল, তবু টিভির পর্দায় প্রেসিডেন্টকে এই ধরনের ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করতে দেখলে সাধারণ মানুষের মনে আশঙ্কা বাড়াই স্বাভাবিক। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার আগে থেকেই নিউ ইয়র্কের মতো প্রায় সব প্রদেশেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পরে চারপাশ আরও থমথমে হয়ে গেল। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান বাদ দিলে বাকি সব ধরনের দোকানপাট, রেস্তরাঁ বা পানশালায় ভিড় নেই বললেই চলে। যে কোনও সুপারমার্কেটে ঢুকতে গেলেই ৫০ জনের লাইন। সবাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করতে ব্যস্ত। জানা নেই, কত দিন বাড়ির মধ্যে বন্দি হয়ে কাটাতে হবে। যাঁরা কয়েক দিন পরে বাজারে গিয়েছেন, তাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসই পাননি। তত দিনে সুপারমার্কেটের তাক ফাঁকা হয়ে গিয়েছে!

Advertisement

প্রথম প্রথম এ দেশের বাসিন্দাদের ভয়কে অমূলক লাগলেও, এখন বুঝি এদের ভয়ের আসল কারণ। এঁরা কেউই নিজেদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছেন না। ‘উন্নত’ দেশগুলির মধ্যে আমেরিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সব চেয়ে ব্যয়বহুল। আগামী দিনে করোনাভাইরাস তাই শুধু মানুষের নয়, মার্কিন স্বাস্থ্য পরিষেবারও কঠিন পরীক্ষা নিতে চলেছে।

(লেখক সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের গবেষক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement