করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইটালিতে। ছবি: এপি।
‘কোভিড-১৯-নেগেটিভ’ শংসাপত্র না থাকলে বিমানে ওঠার অনুমতি মিলছে না। অন্য দিকে ভারত সরকারের তরফে আমাদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও, কবে রিপোর্ট মিলবে জানি না!
অগত্যা রোম শহরেই ‘বন্দি’।
কিন্তু কত দিন বন্দি থাকব? ইটালি জুড়ে তালা-বন্দি চলছে। কিছু দিন আগে কেনা ২০ কেজি চাল, ১০ কেজি ডালও শেষ হতে চলেছে। নগদ টাকাও ফুরোচ্ছে। স্কলারশিপের টাকা মার্চে পাওয়ার কথা থাকলেও, পাইনি। পেলেই বা কী! এটিএম তো বন্ধ।
গোটা ইটালি জুড়ে দোকানপাট বন্ধ। গত ১৪ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ভারতীয় পড়ুয়াদের পরীক্ষা করেছে চিকিৎসক দল। সেই সময় যে একটা মাস্ক দিয়েছিলেন, সেটাই ভরসা। আর কোনও অতিরিক্ত মাস্কও নেই। অনলাইনে অর্ডার করেও পাচ্ছি না। করোনার সংক্রমণ রুখতে ভারত সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন শুনেছি। তা হলে আমাদের জন্যও তো ওই চিকিৎসকদের দিয়ে পর্যাপ্ত মাস্ক পাঠাতে পারতেন।
আমি কলকাতার কুঁদঘাটের বাসিন্দা। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে রোমে বিশেষ স্নাতকোত্তর করতে এসেছি। গত ১৩ জানুয়ারি প্রথম জানতে পারি, উত্তর ইটালিতে বেড়াতে আসা চিনা দম্পতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানি, উত্তর ইটালির মিলানে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
রোম শহরটা সেন্ট্রাল ইটালিতে হওয়ায় প্রথমে স্বস্তি মিলেছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে গোটা দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠল। ফেব্রুয়ারির শেষে আমাদের কলেজ বন্ধ হতেই অনেক সহপাঠী বাড়ি ফিরতে শুরু করলেন। আমিও ৫ মার্চ কলকাতায় ফেরার টিকিট কাটার পরেই জানলাম, ভারত সরকার নির্দেশিকা দিয়েছে ১০ মার্চ থেকে ওই দেশে ফেরার বিমানে উঠতে ‘কোভিড-১৯-নেগেটিভ’ শংসাপত্র লাগবে। এ দিকে আমার টিকিট ১১ মার্চের।
৬ মার্চ হাসপাতালে চার ঘণ্টা লাইন দেওয়ার পরে চিকিৎসকেরা জানালেন আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে না। কারণ করোনার কোনও উপসর্গ আমার নেই। মিলবে না শংসাপত্রও।
ইটালিতে ভারতীয় পড়ুয়াদের যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে, সেখানে আলোচনা হল। ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করে পড়ুয়াদের তালিকা জমা করা হল। দূতাবাস থেকে দেওয়া ফর্মও অনলাইনে পূরণ করলাম। জানানো হল, ‘ব্যবস্থা করা হবে’।
সেই অপেক্ষাতেই চলে এল বিমানে ওঠার দিন। কিন্তু মেডিক্যাল শংসাপত্র তো নেই। ফের দূতাবাসে যোগাযোগ করেও সদুত্তর মিলল না। তবু পৌঁছলাম বিমানবন্দরে। সন্ধ্যার উড়ান বাতিল হয়ে রাত ১২টা হল। জানলাম, ভারত থেকে আসা চিকিৎসক দল পরীক্ষা করে বিমানে ওঠার ছাড়পত্র দেবেন। রাত ১১টার সময় জানলাম বিমান ছাড়বে পরের দিন দুপুরে।
গোটা রাত বিমানবন্দরে কাটানোর পরে সকালে জানলাম আবার বদলেছে উড়ানের সময়। তখনই এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানালেন, চিকিৎসক আসছেন না। তাই শংসাপত্র ছাড়া বিমানে ওঠা যাবে না।
ফিরে এলাম হস্টেলে। ভারতীয় দূতাবাস জানাল, ১৪ মার্চ থেকে পড়ুয়াদের পরীক্ষা করা হবে। যে সব ভারতীয় পড়ুয়ার বিমানের টিকিট আছে শুধু তাঁদেরই পরীক্ষা হল। অবাক লাগছে, যে ভারতীয়েরা ইটালিতে চাকরি করেন, তাঁদের কী হবে? ভারত সরকার আমাদের ফেরানোর ব্যবস্থায় এত বিলম্ব করছেন কেন? পরীক্ষার করেই লাভ কী হল! এত দিন ইটালিতে রয়েছি, সংক্রমণের আশঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে!
কোনও প্রশ্নেরই উত্তর জানি না। শুধু জানি, অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কত দিন...।
(রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী)