— প্রতীকী চিত্র।
মহিলাদের হাতে ‘নগদ নারায়ণ’ এবং প্রবীণদের বিনামূল্যে চিকিৎসা— এই দুই প্রকল্পের জাদুতেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির মসনদ ফের দখল করার স্বপ্ন দেখছে আম আদমি পার্টি (আপ)। পাল্টা আক্রমণে দশ বছরে দিল্লির বেহাল দশা নিয়ে আজ ‘আরোপ (অভিযোগ) পত্র’ প্রকাশ করেছে বিজেপি। সেখানে প্রশ্ন উঠেছে, দিল্লির বায়ুদূষণ, যমুনার দূষণ রোধে দিল্লি সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গে বাড়ির মহিলাদের হাতে নগদ তুলে দিয়ে মহিলা ভোট নিশ্চিত করার পথ দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দিল্লিতেও ‘মহিলা সম্মান যোজনা’ নামে বাড়ির মহিলাদের হাতে ভোটের আগে ১ হাজার ও ভোটে জিতলে ২১০০ টাকা তুলে দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে আপ। প্রবীণদের চিকিৎসা-খরচের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গ্রহণে ‘সঞ্জীবনী যোজনা’-ও চালু করেছে তারা। আজ ওই দু’টি প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
দেশে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া শুধু দিল্লিই এমন একটি রাজ্য, যারা এখনও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প আয়ুষ্মান যোজনা চালু করেনি। পরিবর্তে নিজেদের স্বাস্থ্যবিমা চালু রয়েছে দুই রাজ্যেই। বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে তাই এ বার দিল্লির বর্ষীয়ান নাগরিকদের চিকিৎসা-খরচের যাবতীয় দায়ভার সরকার নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আপের এক সাংসদের ব্যাখ্যা, ‘‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সাহায্য পেতে গেলে অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। কিন্তু দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্য যোজনায় কোনও শর্ত নেই।’’
অতীতে বিনামূল্যে পানীয় জল, একশো ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্য করা, মহল্লা ক্লিনিক চালু করা, সরকারি স্কুলের মানোন্নয়ন করে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোট নিশ্চিত করেছিলেন আপ নেতৃত্ব। এ যাত্রায় মহিলা ও বর্ষীয়ান নাগরিকদের ভোট নিশ্চিত করতে ওই জনমোহিনী নীতি হাতে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে কেজরীওয়ালের দল। আপের ওই সাংসদের কথায়, ‘‘দু’মাস আগেও দলের পরিস্থিতি নড়বড়ে ছিল। কিন্তু দুই প্রকল্প চালুর পরে হাওয়া ঘুরে গিয়েছে।’’ যদিও বিভিন্ন বুথে যে ভাবে বিজেপি নেতারা ভোটারদের নাম বাতিল করার কৌশল নিয়েছেন, তাতে অস্বস্তিতে আপ নেতৃত্ব। বিভিন্ন বুথ থেকে লক্ষাধিক ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া আটকাতে সক্ষম হয়েছেন আপ নেতৃত্ব। কিন্তু নতুন কত নাম তালিকায় সংযোজনে বিজেপি সফল হয়েছে, তা ৬ জানুয়ারি তালিকা প্রকাশ হলে বোঝা যাবে। একই সঙ্গে বোঝা যাবে, কত ভোটারের নাম এক কেন্দ্র বা বুথ থেকে অন্য কেন্দ্র বা বুথে স্থানান্তরিত হয়েছে। আপের এক নেতার কথায়, ‘‘ভোটের দিনে ভোটার তাঁর নাম অন্য বুথে রয়েছে দেখলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। সে কারণে ‘মহিলা সম্মান’ ও ‘সঞ্জীবনী যোজনা’ প্রকল্পে ভোটার কার্ড দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ভিত্তিতে আগে ভাগেই বোঝা যাবে ওই ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে কি না, থাকলেও কোন বুথে রয়েছে।’’
পাল্টা বিজেপির দাবি, আপের শাসনে রসাতলে গিয়েছে দিল্লি। পরিবেশ ও যমুনার দূষণ চরমে, সরকারি হাসপাতাল ও বিদ্যালয়ের দশা বেহাল, রাজস্ব সংগ্রহের হারও নিম্মমুখী। জনমোহিনী নীতির কারণে সরকারের দেনা ক্রমবর্ধমান। এ সব যুক্তি দেখিয়ে আজ আপ সরকারের বিরুদ্ধে ‘আরোপ পত্র’ প্রকাশ করেছে বিজেপি। সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের কটাক্ষ, ‘‘আপ সরকারের প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা দুর্নীতিতে জেল ঘুরে এসেছেন। এঁরা ভোট চান কোন মুখে!’’