—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রুটিরুজির খোঁজে ভিন্ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে উঠে এসেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের রিপোর্ট বলছে, যে পাঁচটি রাজ্য থেকে দেশের প্রায় অর্ধেক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। আবার যে পাঁচটি রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক কাজ করতে যাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ তারমধ্যেও অন্যতম।
পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্যের তালিকায় যে পাঁচটি রাজ্য রয়েছে, তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের পরেই পশ্চিমবঙ্গ। তার পরে রয়েছে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ। পরিযায়ী শ্রমিকদের পছন্দের তালিকায় আগে অন্ধ্রপ্রদেশ ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গ অন্ধ্রপ্রদেশকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। পরিযায়ীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি যাত্রাপথের মধ্যে রয়েছে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গ যাওয়া। ঝাড়খণ্ডের মানুষও পশ্চিমবঙ্গে ভিড় করছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকদের যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ দু’টি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায় ও দেবীপ্রসাদ মিশ্রের তৈরি এই রিপোর্টে একটিতে রাজ্যওয়াড়ি পরিযায়ী শ্রমিকদের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যটিতে, দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের মতো বড় শহরে কী ভাবে জেলা থেকে মানুষ কাজ করতে আসছেন, তার সন্ধান করা হয়েছে। অসংরক্ষিত কামরায় রেলযাত্রা, এক রাজ্যের মোবাইলের সিম অন্য রাজ্যে ব্যবহারের তথ্য, ব্যাঙ্কের তথ্য, ইসরো-র উপগ্রহের ছবি, জমির চরিত্র বদলের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১-র শেষ জনগণনা থেকে ২০২৩-এ পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। ২০১১-য় পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫ কোটি ৫৭ লক্ষ। ২০২৩-এ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ২০ লক্ষে। ২০১১-য় জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজেরখোঁজে যেতেন। ২০২৩-এ জনসংখ্যায় পরিযায়ীদের ভাগ কমে ২৮.৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বক্তব্য, অনুমান করা যায়, বাড়ির কাছাকাছি কাজের সুযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। ভিটেমাটি ছাড়ার হার কমে যাওয়া সার্বিক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত।
রাজ্য সরকারের সূত্রের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গ যদি পরিযায়ী শ্রমিকদের পছন্দের তালিকায় থাকে, তার অর্থ, রাজ্যেও কাজের সুযোগ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান ও কর্নাটকে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির হারসবচেয়ে বেশি।
কলকাতা ও হাওড়ায় কী ভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ কাজ করতে আসেন, তার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদরা দেখছেন, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত লোকাল ট্রেনে চেপে কলকাতায় আসার হার বিপুল হারে বেড়েছে। কিন্তু তার পরে কোভিড ও লকডাউনের কারণে তা এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে যায়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে এখনও লোকাল ট্রেনে করে কলকাতা-হাওড়া আসা আগের জায়গায় পৌঁছয়নি। ২০২৩-এর হিসেব বলছে, লোকাল ট্রেনে চেপে কলকাতায় আসা মানুষের সংখ্যা প্রাক্-কোভিড সময়ের থেকে ১৭ থেকে ২০ শতাংশ কম। দুই ২৪ পরগনা থেকে আসা যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও হুগলি থেকে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। জেলাওয়াড়ি পরিযায়ী কর্মীদের যাত্রায় মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা ও পশ্চিম বর্ধমান থেকে হাওড়া সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট।
পরিযায়ী বৃত্তান্ত
উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ—এই পাঁচ রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ৪৮% ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান
মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু—এই পাঁচ রাজ্যে ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ৪৮% কাজ করতে আসেন
পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রথম পাঁচ গন্তব্য---উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ
পরিযায়ী শ্রমিকদের সবথেকে জনপ্রিয় যাত্রাপথ: উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি, গুজরাত-মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা-অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার-দিল্লি, বিহার-পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের সবথেকে জনপ্রিয় যাত্রাপথ: মুর্শিদাবাদ-কলকাতা, পশ্চিম বর্ধমান-হাওড়া