ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।—ছবি রয়টার্স।
বাইশ হাজার পেরিয়ে কিছুটা গতি কমেছে আমেরিকার মৃত্যুমিছিলের। স্পেনও দাবি করেছে, দৈনিক মৃতের সংখ্যা এখন কিছুটা কম। একই কথা জানাচ্ছে ইটালি, ফ্রান্সও। যার জন্য ইউরোপের কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি গৃহবন্দি থাকার নির্দেশিকা শিথিল করার কথা ভাবছে। একমাত্র যে ব্রিটেন এত দিন বাসিন্দাদের গৃহবন্দি করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছিল না, তারাই এখন দেশ এক বছর তালাবন্ধ করার কথা ভাবছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা মণ্ডলীর বিশেষ বৈঠকে আজ মিলেছে এমনই ইঙ্গিত।
পৃথিবী জুড়ে সংক্রমণের সংখ্যা এখন ১৮ লাখের উপরে। মৃত্যু ১ লক্ষ ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ইউরোপে সব চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ইটালির। ১৯,৮৯৯ জনের প্রাণ যাওয়ার পরে এ দেশে মৃত্যুহার কিছুটা কমেছে। স্পেনে মারা গিয়েছেন ১৭,৪৮৯ জন। ফ্রান্সে সংখ্যাটা ১৪,৩৯৩। কিন্তু ব্রিটেনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিন রাত আইসিইউয়ে কাটিয়েছেন। গত কাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বরিস জনসন বলেছেন, ‘‘ওঁদের জন্যই জীবন ফিরে পেলাম।’’
এর পর আজই বরিস ‘সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিস’-এর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। শোনা গিয়েছে বৈঠকে বরিস জানিয়েছেন, এত দিন বাসিন্দাদের ঘুরে-বেরানো, মেলামেশায় নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার শয্যা এক-এক করে ভরতে থাকার পরে এবং মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ানোর পরে নতুন করে ভাবছে ব্রিটিশ প্রশাসন। বরিস স্পষ্ট জানিয়েছেন, পাব ও রেস্তরাঁ বন্ধ না করলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না দেশে। আর এই লকডাউনের সময়কাল এক বছর পর্যন্ত হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে বন্ধ উৎসব, বাড়িতে বসেই নববর্ষ পালনের আহ্বান হাসিনার
ব্রিটেনের বিশেষজ্ঞরাও আপাতত স্কুল-কলেজ-সহ যে কোনও ধরনের জমায়েত দীর্ঘমেয়াদি ভাবে বন্ধ রাখার উপরে জোর দিচ্ছেন। বন্ধ রাখা হবে বাজার-দোকানও। তাতে দরিদ্র পরিবারগুলি কঠিন আর্থিক পরিস্থিতিতে পড়লেও কিছু উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘সরকার যদি বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়, তবেই দেশের মানুষ এর গুরুত্ব বুঝবে।’’
বাসিন্দাদের দীর্ঘ তিন মাস গৃহবন্দি রাখার পরে অবশেষে একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল চিনের হুবেই প্রদেশ। কিন্তু নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে সেখানে। গত কয়েক সপ্তাহে এই প্রথম এক দিনে ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন চিনে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সংক্রমণ সম্পর্কে বেজিংয়ের দাবি, আক্রান্তেরা সকলেই বিদেশ ফেরত। তাঁদের থেকেই কিছু স্থানীয় সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: সব রেকর্ড ভেঙে ১০৭ বছরের মহিলা হারিয়ে দিলেন করোনাভাইরাসকে
এ দিকে দীর্ঘকাল লকডাউনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-র কথায়, ‘‘এখনও সুপারমার্কেটে খাবার মজুত রয়েছে। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে শীঘ্রই খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খলে ভাঙন ধরবে। কারণ চাষি, কৃষি ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে যুক্ত কারখানা, জাহাজ পরিবহণ, বড় থেকে ছোট ব্যবসায়ী... পুরো পদ্ধতিটাই ভেঙে পড়বে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)