প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটি পেরিয়েছে। মঙ্গলবারই এই খবর জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সমীক্ষা সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার্স। বুধবার যা নিশ্চিত করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সও। এর মধ্যেই করোনায় মৃতের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে ব্রিটেনে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অতিমারি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপর ‘একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের’ দায় চাপিয়ে তাঁকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধীদের পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের একাংশও।
মঙ্গলবারের পর আমেরিকা, ব্রাজিল, ভারত এবং মেক্সিকোর পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা লক্ষ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে ব্রিটেন। সেই সূত্রে বিরোধী দল লেবার পার্টির দাবি, বিশেষজ্ঞদের কথা উপেক্ষা করে অতিমারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় একের পর এক ‘মারাত্মক সব ভুল’ করে গিয়েছে বরিস সরকার। তাদের আরও দাবি, মার্চেই লকডাউন ঘোষণার উপদেশ দিলেও তা মানেনি সরকার। সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরেও বিশেষজ্ঞদের মত অমান্য করে লকডাউন জারির ক্ষেত্রে দেরি করা হয়। তাদের আরও দাবি, কার্যকর ভাবে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়েও ব্যর্থ হয়েছে তারা। সীমান্তে স্বাস্থ্য বিধি পালনের ক্ষেত্রেও তাই।
জনসন অবশ্য বিরোধীদের সরাসরি কোনও জবাব দেননি। তবে মঙ্গলবার তিনি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির দায় আমি নিচ্ছি।’’ পাশাপাশি যে-সব দেশে সংক্রমণের বহর বেশি সেখান থেকে ব্রিটেনে আসার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের হোটেলেই দিন দশেক কোয়রান্টিনে রাখা হবে কি না যাত্রীদের, তা নিয়েও পর্যালোচনা চলছে। এই তালিকায় পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ মোট ৩০টি দেশকে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তেমনটা না করা হলে ব্রিটেন স্ট্রেনের পাশাপাশি আরও একাধিক স্ট্রেন সে দেশে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবা না।
অতিমারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর উপর ‘বিরক্ত’ হয়ে আমেরিকাকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়ে গিয়েছিলেন সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা ইতিমধ্যেই স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমেরিকার বর্তমান প্রশাসকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হু-এর এগজিকিউটিভ বোর্ডের ১৪৮তম বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের প্রতিনিধি তথা এই বৈঠকের সভাপতি হিসেবে আমেরিকার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ এ দিন বাইডেনের প্রশাসনের তরফে বৈঠকে ছিলেন সে দেশের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউচি।
আরও ২০ কোটি ভ্যাকসিনের বরাত দেওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে আমেরিকা। যার মাধ্যমে আসন্ন গ্রীষ্মের মধ্যেই বেশির ভাগ দেশবাসীর প্রতিষেধক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে বলে মঙ্গলবার জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ফাইজ়ার এবং মর্ডানা, দুই প্রস্তুতকারকের থেকে ১০ কোটি করে ভ্যাকসিন নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে বিশ্বের বহু দেশেই চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না ভ্যাকসিন। সঙ্গে যন্ত্রণা বাড়িয়েছে করোনা ভাইরাসের একাধিক নয়া স্ট্রেন। এর মধ্যে আক্রান্ত ১০ কোটি পেরোনো আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১.৩% ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে। প্রত্যেক ৭.৭ সেকেন্ডে আক্রান্ত হয়েছেন এক জন করে। প্রত্যেক দিনই গড়ে ৬৬৮,২৫০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। বিশ্বে মৃত্যুর হার ২.১৫%। সব চেয়ে বিধ্বস্ত দেশগুলির মধ্যে যথাক্রমে আমেরিকায়, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া এবং ব্রিটেন।