অবশেষে চূড়ান্ত হল জলবায়ু চুক্তি। ছবি সংগৃহীত।
অবশেষে চূড়ান্ত হল জলবায়ু চুক্তি। প্রায় ২০০টি দেশ দু’সপ্তাহ ধরে আলোচনার পরে গত কাল চুক্তিতে সই করেছে। সিওপি২৬ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, গ্রিন হাউস গ্যাসের মূল উৎস কয়লা। এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ভারত দাবি করে, জীবাশ্ম জ্বালানি ধাপে ধাপে পুরো বন্ধ না করে তার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এই চু্ক্তিতে রীতিমতো অসন্তুষ্ট গ্রেটা থুনবার্গ-সহ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, জলবায়ু নিয়ে রাষ্ট্রনেতাদের কথায় এবং কাজে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
গ্লাসগো সম্মেলন হল রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রথম জলবায়ু সম্মেলন যেখানে কয়লার ব্যবহার বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখার লক্ষ্যে আরও কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। বিষয়টি আলোচনার জন্য আগামী বছর ফের বৈঠকে বসে সম্মত হয়েছে দেশগুলি। সিওপি-২৬-সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মা বলেন, ‘‘সহমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মনে করি, এই পৃথিবী এবং বিশ্ববাসীর জন্য আমরা তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।’’
কয়লার ব্যবহার বন্ধ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে দেশগুলির মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। অনেক দেশই কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করেছে। ভারতের পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে গরিবি দূরীকরণ, উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজ চালিয়ে যেতে হয়। তারা কী ভাবে কয়লা বা জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি দেবে? জলবায়ুর পরিবর্তন রুখতে পরিবেশ-বান্ধব জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণের উপরে গুরুত্ব দেন ভূপেন্দ্র। তিনি জানিয়েছেন, কম আয়ের পরিবারগুলি যাতে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য ভারতে ভর্তুকি দেওয়া। ফলে ওই পরিবারগুলি রান্নার জন্য কয়লা ব্যবহার করছে। কমছে দূষণ।
মূলত ভারতের আপত্তিতেই কয়লা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধাপে ধাপে কমাতে হবে। অপ্রয়োজনীয় জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য ভর্তুকি ধীরে ধীরে তুলে দিতে হবে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের জাতীয় পরিস্থিতির কথা মনে রেখেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে। যাতে আমজনতার অসুবিধা না হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সুইস পরিবেশমন্ত্রী সিমোনেত্তা সোম্মারুগার ক্ষোভ, শেষ মুহূর্তে জীবাশ্ম জ্বানালি নিয়ে ভাষা বদলের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ধাপে ধাপে ব্যবহার কমালে হবে না, বরং ধাপে ধাপে কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে ভর্তুকি বন্ধ করে দিতে হবে।’’ ভারত বরাবর বলছে, ধনী ও উন্নত দেশগুলিকে জলবায়ু সঙ্কট নিরসনে বাড়তি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করতে হবে।
তবে রাষ্ট্রপুঞ্জ সম্মেলনের আগে যে তিনটি প্রস্তাব রেখেছিল, তার একটিও সম্মেলেন আলোচিত হয়নি। তারা বলেছিল, ২০৩০ নাগাদ কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অর্ধেক কমাতে হবে। ধনী দেশগুলি থেকে গরিব দেশগুলিকে দশ হাজার কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। জলবায়ু বদলের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে মানিয়ে নেওয়ার পিছনে যাতে ওই অর্থের অর্ধেক যায়, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে।