চিনই এখন ত্রস্ত করোনার ডেল্টা রূপের হানায়।
ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের গল্প মনে আছে? যার তৈরি করা দৈত্য তার উপরেই প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছিল। চিনে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা রূপের প্রত্যাবর্তনে সেই গল্পেরই ছায়া দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতিমারি পরিস্থিতির শুরুতে চিনের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর অভিযোগ এনেছিল আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ। দেড় বছরের মাথায় সেই চিনই এখন ত্রস্ত করোনার ডেল্টা রূপের হানায়!
চিনের উহানে খোঁজ মেলা করোনা ভাইরাসের প্রথম রূপের দেড় বছরের অভিযোজনের ফল এই ডেল্টা রূপ। চিনের সরকারি তথ্য বলছে, গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির অন্তত ১৬টি প্রদেশে এই ডেল্টা রূপের হদিশ মিলেছে।
এক মাস আগেও নিজেদের করোনামুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল চিন। করোনার বিরুদ্ধে তারা যে ‘জিরো টলারেন্স’ রণনীতি নিয়েছিল, তার সোজা বাংলা করলে দাঁড়ায় করোনা ভাইরাসের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা হবে না। আপাতত সেই চিনেরই বেজিং, সাংহাই, উহানের মতো শহরে ডেল্টা আক্রান্ত কয়েকশো রোগীর খোঁজ মিলেছে। আক্রান্ত এলাকাগুলির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা।
তবে এরপরও চিন করোনার দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানো ডেল্টা রূপকে কতটা প্রতিরোধ করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ চিনেরই বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ইতিমধ্যেই মাস্ক না পরা এবং করোনাবিধি না মানার গা-ছাড়া প্রবণতা দেখা গিয়েছে চিনের বিভিন্ন প্রদেশে। সেই প্রবণতার কারণেই ডেল্টা রূপ ইতিমধ্যেই আরও বেশি ছড়িয়ে থাকতে পারে। যার খোঁজ হয়তো এখনও পায়নি চিন।
ভারতের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। কারণ হিসেবে করোনার ডেল্টা রূপকেই দায়ী করেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। চিন অবশ্য ততদিনে সতর্কতার দুর্গ তৈরি করেছে দেশজুড়ে। পরীক্ষা করে বিমানে ওঠানো হচ্ছে যাত্রীদের। নামার পরও চলছে পরীক্ষা, জীবাণুমুক্তকরণ। সেই দুর্গ ভাঙল নানজিঙে। ১০ জুলাই এয়ার চায়না ফ্লাইট সিএ৯১০ চিনে নামল একজন ডেল্টা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে। সেই ঘটনার এক মাসও পূর্ণ হয়নি। তার আগেই গত ২৪ ঘণ্টার হিসেব বলছে চিনে এক দিনে ১২৪ জন ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছেন।
চিনের নানজিং বিমানবন্দর সূত্রে বলা হয়েছে, বিমানটিকে জীবানুমুক্ত করার সময় বিমানবন্দরেরই এক কর্মী করোনার ডেল্টা রূপে আক্রান্ত হন। মনে করা হচ্ছে, তাঁর থেকেই করোনার ডেল্টা রূপের চিনে প্রত্যাবর্তন।