ফের প্রশ্নের মুখে চিনফিং সরকার। —ফাইল চিত্র।
দেশের সংবাদমাধ্যমকে ‘ঠুঁটো’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার বিদেশি সাংবাদিকদেরও ‘জব্দ’ করতে শুরু করল চিন সরকার। প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের পরিবারকে নিয়ে খবর করায় মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক সাংবাদিককে দেশছাড়া করল তারা। বাতিল করা হল সে দেশে তাঁর কাজ করার ছাড়পত্রও। চিনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
২০১৪ থেকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বেজিং ব্যুরোতে কর্মরত ছিলেন চুন হান ওং। আদতে সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা তিনি। গত ৩০ জুলাই চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের খুড়তুতো ভাই মিং চাইকে নিয়ে এক সহকর্মীর সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি প্রতিবেদন লেখেন তিনি। তাতে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী মিং চাইয়ের ‘কুকীর্তি’র কথা প্রকাশ করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট তুলে ধরে বলা হয়, সেখানকার ক্যাসিনো সম্রাট জেমস প্যাকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মিংয়ের। জেমসের ক্যাসিনোয় জুয়া খেলে কোটি কোটি টাকা ওড়ান তিনি। এমনকি মেলবোর্নের একটি সংস্থার মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়।
চিনফিং খুড়তুতো ভাইয়ের কীর্তির কথা না জানলেও, তাঁর নাম ভাঙিয়েই মিং অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন ওই সাংবাদিক। ওই প্রতিবেদনে চিনফিংয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে যদিও কোনও প্রশ্নই তোলা হয়নি, তাঁর পরিবারের সদস্যের গায়ে কালি ছিটানো হয়েছে বলে মত বেজিংয়ের। তাই ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই মতো শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়যে, ভবিষ্যতে আর কখনও চিনে ঢুকে কাজ করতে পারবেন না চুন হান ওং।
আরও পড়ুন: অসমে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশ, বাদ পড়লেন ১৯ লক্ষ
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে এর আগে বহু বার বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসার আবেদন নাকচ করেছে চিন। কিন্তু এক জন সাংবাদিককে নিষিদ্ধ করার ঘটনা এই প্রথম। তা-ও আবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো ঐতিহ্যশালী সংবাদপত্রের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে! এ ব্যাপারে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘চুন হান ওংকে কাজের ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করেছে বেজিং। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’
তবে কোনও ভাবেইতারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে চিনা বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, কিছু বিদেশি সাংবাদিক ইচ্ছাকৃত ভাবে চিনের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই ধরনের সাংবাদিকদের জন্য এ দেশে কোনও জায়গা নেই। আগেও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সতর্ক করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে তারা। তবে চুন হান ওং-ই প্রথম নন,এই নিয়ে ২০১৩ থেকে এখনও পর্যন্ত ছ’জন বিদেশি সাংবাদিককে চিন দেশছাড়া করেছে বলে দাবি সে দেশের ‘ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব’-এর।
আরও পড়ুন: এনআরসি তালিকায় নাম খুঁজবেন কী ভাবে, নাম না থাকলে কী করতে পারেন
এর আগেও, শি চিনফিং সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের শ্বাসরোধ করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, শি চিনফিংয়ের আমলে বাক স্বাধীনতা খর্ব হতে বসেছে চিনে। ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপকরা হচ্ছে সেখানে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের গতিবিধির উপর নজরদারিও চলছে সর্বদা।