—প্রতীকী চিত্র।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। মোটরবাইক আরোহী কয়েক জন বন্ধু এসে ডেকে নিয়ে যান যুবককে। বাড়ি থেকে বেরোনোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ই এম বাইপাসের উপরে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ওই যুবকের। রবিবার রাতে বেলেঘাটা থানা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বড়দিন এবং বর্ষবরণের আগে রাতের শহরে দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যুতে পথের নিরাপত্তার পাশাপাশি নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম রোশন সিংহ। বছর বাইশের রোশনের বাড়ি বেলেঘাটার চালপট্টি এলাকায়। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ই এম বাইপাসে বেলেঘাটা থানা এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বেপরোয়া গতিতে ই এম বাইপাস ধরে যাওয়ার সময়ে রামমোহন গার্ডেন মল্লিক লেনের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারায় মোটরবাইকটি। সোজা গিয়ে সেটি রাস্তার পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়েন রোশন। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। পুলিশ খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। প্রাথমিক ভাবে ওই যুবক বিনা হেলমেটে বাইক চালাচ্ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
তবে, দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যুর পরেই বন্ধুদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের সদস্যেরা। তাঁদের দাবি, রোশন বাড়ি থেকে দাদার বাইক নিয়ে বেরোলেও দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাইকটি তাঁদের নয়। সেটি রোশনের এক বন্ধুর বলে তাঁরা জেনেছেন। এক দল বন্ধু একসঙ্গে বেরিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালেও কোনও বন্ধু রোশনের বাড়িতে খবর দেওয়া বা তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেননি বলেও অভিযোগ পরিবারের। ঘটনাস্থল থেকে সবাই পালান বলেও দাবি তাঁদের। যুবকের বাবা সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘বাড়ির যে বাইকটি নিয়ে গিয়েছিল ছেলে, সেটি দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে দাঁড় করানো ছিল। এমনকি, সেটির চাবিও ছিল না। ফলে বোঝা যাচ্ছে, একসঙ্গে অনেকে ছিল। কিন্তু কেউ কেন ওকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেল না?’’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক বন্ধুর বাইক নিয়ে চালানোর সময়ে বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যেই বাইকটি আটক করে বেলেঘাটা থানায় নিয়ে এসেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার। রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সোমবার সকালে যুবকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিবেশীরা ভিড় করে রয়েছেন। বাড়ির সামনের ফুটপাতে বসে রয়েছেন বাবা এবং যুবকের দাদা। ভিতর থেকে মাঝেমধ্যে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। কেউই কার্যত কোনও কথা বলার অবস্থায় নেই। বাড়ির সামনে দাঁড়ানো যুবকের এক বন্ধু শুধু বললেন, ‘‘পাড়ায় কারও সঙ্গে ওর বিবাদ ছিল না। বন্ধুরা যদি ওকে ফেলে পালিয়ে না গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতেন, তা হলে হয়তো এটা হত না।’’