ফাইল চিত্র।
আমেরিকায় করোনা সংক্রমণ যে ফের বাড়ছে, গত কয়েক দিন ধরেই তার আঁচ মিলছিল। পরিস্থিতি নাগালে রাখতে মঙ্গলবার নতুন মাস্কবিধি জারি করল জো বাইডেনের প্রশাসন।
টিকাকরণের দৌড়ে এগিয়ে থাকা আমেরিকায় মে মাসের মাঝামাঝি মাস্কবিধি শিথিল করেছিল সরকার। তখন করোনার আলফা স্ট্রেনেই অধিকাংশ সংক্রমণ ঘটছিল। সে সময়ে বলা হয়েছিল, টিকা নেওয়া থাকলে মুক্ত বা বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র বদলাচ্ছে করোনাভাইরাস। নতুন ডেল্টা স্ট্রেন আগেরগুলির তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তার সঙ্গে পাল্লা দিতে তাই লড়াইয়ের কৌশল ফের বদলে ফেলছেন বিশেষজ্ঞেরা। সেন্টার ফর ডিজিজ় কন্ট্রোল (সিডিসি) তাদের নয়া নির্দেশিকায় জানিয়েছে, এ বার থেকে বদ্ধ স্থানে সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তদেরও মাস্ক পরতে হবে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজেও প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আমেরিকার করোনা বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউচি বলেছেন, ‘‘করোনাভাইরাস চরিত্র বদল করছে। যন্ত্রণাদায়ক হলেও এটাই সত্যি। মানুষকে তা বুঝতে হবে। টিকাপ্রাপ্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মাস্কবিধি বদলানো হয়েছে।’’ আমেরিকার আর এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিবেক মূর্তি বলেছেন, ‘‘মাস্ক পরে সংক্রমণ খানিকটা ঠেকানো যাবে ঠিকই, তবে অতিমারিকে কাবু করতে টিকাকরণের বিকল্প নেই। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে এখনও টিকাই শক্তিশালী হাতিয়ার। টিকা নেওয়ার অনেকের প্রাণ বেঁচেছে। সংক্রমিতদের একটা বড় অংশকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে বাঁচাচ্ছে এই টিকাই।’’ মূর্তির মতে, মাস্কবিধি বদলানোয় ঘাবড়াবার কিছু নেই। তিনি বলেছেন, ‘‘করোনায় বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকা পিছু হটছে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই।’’
এ দিকে সিডনিতে আরও চার সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। অস্ট্রেলিয়ায় টিকাকরণের হার মোটেই সন্তোষজনক নয়। তার মধ্যে সিডনি-সহ প্রধান প্রধান শহরগুলিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত এক মাস ধরে সেখানে লকডাউন চলছিল। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি না-বদলানোয় লকডাউন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে বাঁচাতে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। কড়া লকডাউন চললেও নির্মাণ সংস্থাগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছোট ব্যবসাগুলির জন্য আরও সরকারি অনুদানের কথা ঘোষণা করেছে মরিসন সরকার। করোনায় কাজ হারানো শ্রমিক এবং নিম্নবিত্তদের জন্য বাড়ানো হচ্ছে সরকারি অনুদান। আজ ক্যানবেরায় এক সাংবাদিক বৈঠকে মরিসন বলেন, ‘‘সিডনিকে এই লকডাউনের ঝাপটা সামলে উঠতে হবে। অন্য কোনও শর্টকাট নেই। এই ঝড়ে আমাদের টিকে থাকতে হবে।’’
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সংক্রমণ এখন সবচেয়ে বেশি ইন্দোনেশিয়ায়। তাইল্যান্ডে, মায়ানমারের অবস্থাও ভয়াবহ। রোগীর ভিড়ে উপচে পড়ছে তাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলি। স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে চাপ কমাতে সংক্রমিতদের ট্রেনে চাপিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। গৃহযুদ্ধ বিদীর্ণ মায়ানমারে আন্তর্জাতিক স্তরে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে জুন্টা সরকার।