ছবি: সংগৃহীত
কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! ব্রাজিলের সার্বিক কোভিড পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ সরকার— এই অভিযোগে মাস দু’য়েক আগে প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল পার্লামেন্টের একটি তদন্তকারী কমিটি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে প্রকাশ্যে এল সরকারের ওষুধ ও ভ্যাকসিন আমদানি নিয়ে বিশাল অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। যে দুই ওষুধ এবং ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের সূত্রে জড়িয়ে গেল মোদী সরকার তথা ভারতের নামও।
অতিমারির শুরু থেকেই বিষয়টিকে হালকা ভাবে নেওয়ার অভিযোগ ছিল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা, প্রতিষেধক নেওয়ার মতো বিষয়গুলিকে কখনও তেমন গুরত্ব দেননি বোলসোনারো। এমনকি নিজের কোভিড-আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছিলেন রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে। তা-ও আবার মাস্ক না-পরে। অথচ মৃত্যুর নিরিখে আমেরিকার পরে ব্রাজিল। সংক্রমণেও এগিয়ে তারা। সম্প্রতি দেশের বেহাল কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে সংসদে একটি তদন্তকারী কমিটি গড়া হয়। তাতেই সামনে এসেছে যে টিকা কিনতে ২০২০ সালের নভেম্বরে ভারতীয় প্রতিষেধক নির্মাতা সংস্থা ভারত বায়োটেকের সঙ্গে একটি চুক্তি হয় বোলসোনারো প্রশাসনের। চুক্তি অনুযায়ী, প্রায় ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ২ কোটি ডোজ় টিকা সরবরাহ করার কথা ছিল ভারত বায়োটেকের। আট মাস পরেও তার একটি ডোজ়ও পাননি ব্রাজিলের মানুষ। কোভ্যাক্সিন এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বা ব্রাজিলের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ছাড়পত্র পায়নি।
প্রশ্ন উঠছে, যে বোলসোনারো সরকার এক সময় ফাইজ়ার বা অন্য প্রতিষেধকের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, সেখানে কোভ্যাক্সিন কেনার জন্য ‘বিশেষ ভাবে ব্যাগ্র’ হয়ে ওঠার কারণ কী! এখানেই দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। যে স্থানীয় সংস্থার মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল, প্রশ্ন উঠছে তার ভূমিকা নিয়েও। তদন্তকারী কমিটির অন্যতম সদস্য সেনেটর রেনান ক্যালহেরোস বিষয়টিকে সরাসরি দুর্নীতি বলেই অভিহিত করেছেন। অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের অন্দরেও। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক আমলার অভিযোগ, কোভ্যাক্সিন আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাঁকে ‘প্রবল চাপ’ দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় এক সংবাদপত্রে দেওয়া গোপন সাক্ষাৎকারে তাঁর দাবি, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠজনই ওই চাপ সৃষ্টি করেছিল। প্রতিষেধকের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে ভারত থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আমদানি নিয়েও। করোনা চিকিৎসায় যে ওষুধটির তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। প্রশ্ন উঠছে, বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভারত থেকে সেই ওষুধ এবং অন্য সমস্ত টিকার থেকে বেশি দামে কোভ্যাক্সিন কিনতে কেন এত জোর দিয়েছে বোলসোনারো সরকার। মধ্যস্থতাকারী সংস্থাটি কি তবে এর মাধ্যমে সরকারের থেকে লাভবান হয়েছে? অভিযোগ অস্বীকার করেছে সরকার এবং ওই সংস্থা।
ব্রাজিলে এখনও টিকাকরণের হার সন্তোষজনক নয়। ফাইজ়ার, অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ও চিনের একটি ভ্যাকসিনের ভরসায় টিকাকরণ চলছে। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে সাও পাওলোর পথে বিক্ষোভে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। সুস্থ জীবন, রুটি, টিকা আর সুষ্ঠু পড়াশোনার অধিকারর দাবিতে পথে নেমেছেন কলেজ পড়ুয়ারাও।