লন্ডনে ভোটকেন্দ্রের বাইরে। এপি
বুথে ঘুরছেন সান্তা ক্লজ! ভোটারদের চাঙ্গা করতে বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা দিনে হাসিমুখে দেখা গেল তাকে। গত প্রায় একশো বছরে ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন দেখেনি ব্রিটেন। শুধু তাই নয়, পাঁচ বছরেরও কম সময়ে দু’দুবার ভোট হয়ে গিয়েছে এ দেশে, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে। তার পর আজ আবার ভোটের বাদ্যি ব্রিটেন জুড়ে। বড়দিনের মরসুমে বাজার-হাটে ব্যস্ত এখানকার মানুষ। সে সব থামিয়েই আজ ভোটের লাইনে দাঁড়ালেন তাঁরা।
উবের চালক ব্রাইট (আদতে নাইজেরিয়ার) বলছিলেন, ‘‘আমার স্ত্রী ভোট দিতে চায়নি। আমিই ওকে বলেছি, ভোটটা দিয়ে এসো। এ বারের ভোটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বারই ঠিক হয়ে যাবে, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থেকে যাব কি না।’’ ব্রাইট অবশ্য মনে করেন, ইইউ-এ থেকে যাওয়াই উচিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার মতে, ইইউ ছাড়া উচিত নয়। বরিস জনসন আর কনজ়ারভেটিভদের পছন্দ নয় আমার। ওরা আমাদের কথা ভাবে না।’’ দিনের কাজ জলদি মিটিয়ে উত্তরপশ্চিম লন্ডনের হ্যাকনিতে গিয়ে ভোটটা দিতে চান ব্রাইট। ওই আসনটি ৩০ বছর ধরে রেখেছেন লেবার পার্টির ডায়ান অ্যাবট। ব্রাইট পরে গেলেও অনেকে কাজ শুরুর আগেই ভোট দিতে চলে গিয়েছেন সকাল সকাল।
নিজের পোষ্য কুকুর ডিলাইনকে নিয়ে মধ্য লন্ডনে ভোট দিতে গিয়েছিলেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিরোধী লেবার নেতা জেরেমি করবিন উত্তর লন্ডনে ভোট দেওয়ার পরে পোজ় দিয়ে ছবিও তুলেছেন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেত্রী নিকোলা স্টার্জন গ্লাসগোর বুথে ভোট দেন। লিবারাল ডেমোক্র্যাট নেত্রী জো সুইনসন ভোট দিতে গিয়েছিলেন স্বামী ডানকান হেমসের সঙ্গে।
আপাতত বরিস জনসনের চিন্তা, তাঁর দল ৩২৬টি আসন জোগাড় করতে পারবে কি না। গত কাল টেলিভিশনের সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার না দেওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ার বিদ্রুপের নিশানা করা হয় জনসনকে। বলা হয়, ‘ফ্রিজের মধ্যে লুকিয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী!’ গত কাল সকালের দিকে ইয়র্কশায়ারে তিনি দুধ সরবরাহকারী একটি সংস্থার সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। সেখানে এক টিভি সাংবাদিকের মুখে পড়েন জনসন। যাঁকে তিনি বলেন, ‘‘আমি পরে ফিরে আসছি।’’ কিন্তু তার পর আর দেখা মেলেনি তাঁর। উল্টে একটি ফ্রিজারের মধ্যে ঢুকতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। সেই দৃশ্য থেকেই শুরু হয় ঠাট্টা।
আর একটি ব্রিটিশ চ্যানেলেও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কে অংশ না নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন জনসন। তবে বিতর্ক সত্ত্বেও ভোটসমীক্ষায় এগিয়ে তিনিই। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, জনসনকে বলা হয়েছে আপাতত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার দরকার নেই। মুখে শুধু একটাই কথা বলুন, ‘‘ব্রেক্সিটটা করে ফেলতে হবে।’’
তিনি লেবার পার্টির নেতৃত্বে থাকবেন কি না, তা বোঝার জন্য বিরোধী নেতা করবিনের কাছে এটাই শেষ সুযোগ। কনজ়ারভেটিভরা জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস) বেচে দেবে— এই বার্তা দিয়ে ভোটারদের মন কাড়তে চেয়েছেন করবিন। বস্তুত ব্রাইটের মতো এনএইচএস-এর উপরে নির্ভরশীল লোকজনই ভরসা করবিনের। ইইউয়ে থেকে যেতে চান যাঁরা, সেই ভোটাররা ভরসা লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের।
গত কয়েক সপ্তাহের নানাবিধ বিতর্কের পরে টিভি চ্যানেলগুলো আজ মোটামুটি চুপ। কারণ ভোটের দিনে নির্বাচন নিয়ে কোনও বিশ্লেষণ চলবে না। ইলেকট্রনিক ভোটের কোনও ব্যাপার নেই এখানে। ভোটাররা ছোট পেন্সিল দিয়ে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও দলের পাশে দাগ দেন। বুথের সামনে নিজস্বী তোলাও নিষেধ। কারণ এ ধরনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হলে ভোটে প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হয়।