ছবি- এএফপি
জেলের সামনে পড়ে রয়েছে গুলিবিদ্ধ মৃতদেহের স্তূপ। ওই স্তূপ থেকে একটি দেহ পাশে টেনে এনে ছিঁড়ে খাচ্ছে কতগুলি কুকুর। গত রবিবার ছয় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কুন্দুজ ছাড়ার আগে এই দৃশ্যই দেখেছেন ৩৬ বছরের ফ্রিবা। ওই দিনই কুন্দুজ দখল করেছে তালিবান।
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করার পরই সে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়েছে তালিবান। ইসলামিক উগ্রপন্থী সংগঠনের আক্রমণের মুখে বিভিন্ন এলাকা থেকে সরতে বাধ্য হয়েছে আফগান সেনা। শেবেরগান, কুন্দুজ, তালোকান তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। মঙ্গলবার মাজার-ই-শরিফকেও ঘিরে ফেলেছে তারা। খুঁজে বার করে খুন করা হচ্ছে আফগানিস্তানের সরকারি আধিকারিক, নিরাপত্তারক্ষীদের।
দিন তিনেক আগে কুন্দুজের এক নাপিতকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। তালিবান ভেবেছিল ওই ব্যক্তি সরকারের হয়ে কাজ করছেন। ২২ বছরের মীরওয়াইস খান আমিরি বলেন, ‘‘যে সব সরকারি আধিকারিক চার-পাঁচ বছর আগে অবসর নিয়েছেন, তাঁদেরও খুঁজে বার করে মেরে ফেলা হচ্ছে’’। তালিবানরা কুন্দুজ দখল নেওয়ায় তিনিও ওই প্রদেশ ছেড়েছেন। ছুরি দিয়ে ছেলের মুণ্ডু কেটে তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছে তালিবান। কাঁদতে কাঁদতে ওই অভিজ্ঞতার কথা সংবাদ সংস্থা-কে জানালেন বাবা আব্দুল মানান।
গত শনিবার তালোকান ছেড়ে পালিয়েছিলেন ২৫ বছরের বিধবা মারওয়া। তাঁর ১৬ বছরের তুতো বোনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তালিবান। তাঁর সঙ্গে কোনও এক তালিবান জঙ্গির বিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘পরিবারে দু’জন মহিলা থাকলে এক জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে তালিবান জঙ্গির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দু’জন পুরুষ থাকলে একজনকে জোরজবরদস্তি নিয়ে গিয়ে হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিচ্ছে।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জের অভিবাসন দফতর জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তালিবানের দখলে চলে যাওয়া প্রদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ ৫৯ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। অধিকাংশ মানুষই আশ্রয় নিয়েছেন কাবুলে। সেখানেই তাঁবু খাটিয়ে কোনও রকমে বেঁচে রয়েছেন তাঁরা। কিছু দিনের মধ্যেই কাবুলে হামলা চালাতে পারে তালিবান, এই আশঙ্কায় দিন গুনছেন ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে আসা আফগানরা। ‘‘তা হলে কোথায় পালালে বাঁচা যাবে’’, কাঁদতে কাঁদতে বলছেন কুন্দুজের বিচারবিভাগীয় দফতরের আধিকারিক আজিজুল্লা।