কাশ্মীর নিয়ে ভারসাম্যের নীতি নিতে চাইছে ব্রিটেন

গত কাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনে কথা বলেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও লন্ডন শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেনের অবস্থান স্পষ্ট করে মোদীকে জানিয়েছেন, কাশ্মীর সমস্যা ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। ছবি: রয়টার্স।

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েন চরমে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা যখন মাঝেমধ্যেই মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ তুলে সাউথ ব্লকের রক্তচাপ বাড়াচ্ছে, তখন ব্রিটেন ভারসাম্যের নীতি নিয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে বরিস জনসন সরকারকে কার্যত দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছে হচ্ছে।

Advertisement

কূটনীতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ব্রিটেনে ভারত এবং পাকিস্তানের বহু মানুষ বসবাস করেন। এক দিকে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। অন্য দিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ব্রিটেন যোগ— উভয় দিক বজায় রেখে চলতে হচ্ছে জনসন সরকারকে।

গত কাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনে কথা বলেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে। ভারতকে আশ্বস্ত করে জনসন জানিয়েছেন, ব্রিটেনে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোদী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তানের তরফে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গি-উস্কানির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। এই সব বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি বলেও সওয়াল করেন মোদী। ওই ফোনালাপের পর ডাউনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (বরিস জনসন) এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের অবস্থান স্পষ্ট করে মোদীকে জানিয়েছেন, কাশ্মীর সমস্যা ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। দু’দেশকে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’

Advertisement

সূত্রের বক্তব্য, কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্রিটেন আর যা-ই করে থাকুক, ফ্রান্স বা আমেরিকার মতো পুরোপুরি ভারতের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং পরিষদের কাছে অনুরোধ করেছিল বিবৃতি দিতে। জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও ব্রিটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন বলে খবর। কিন্তু

ব্রিটেনের বিদেশ দফতর জানিয়েছিল, ব্রিটেন চিনের পাশে দাঁড়ায়নি এবং কোনও পক্ষাবলম্বন করেনি। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের ওই অংশের মত, কাশ্মীর নিয়ে শ্যাম-কুল দু-ই রাখতে চাইছে ব্রিটেন।

গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে উন্মুখ লন্ডন। কনজ়ারভেটিভ পার্টির সমর্থন বরাবরই পেয়েছে ভারত। ডেভিড ক্যামেরন, টেরেসা মে-র পরে জনসনও ভারতের সঙ্গে সখ্যের পথেই এগিয়েছেন। তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ব্রেক্সিট-পরবর্তী অধ্যায়ে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানো ব্রিটেনের অগ্রাধিকার।

ইমরান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ইসলামাবাদের সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্ক পোক্ত হয়েছে। ইমরানের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিনি নিজে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। ব্রিটিশ ধনকুবের তথা রাজনীতিক জেমস গোল্ডস্মিথের কন্যা জেমাইমাকে একদা বিয়ে করেছিলেন ইমরান। এই গোল্ডস্মিথই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রচারক ছিলেন। জেমাইমার ভাই জ্যাক গোল্ডস্মিথ, কনজারভেটিভ পার্টির এমপি-ও বটে। জ্যাক আবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ভাইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ইমরানের সঙ্গে ব্রিটেনের পারিবারিক, ব্যক্তিগত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ রয়েছে। ফলে জনসন এমন কিছু করতে পারবেন না, যাতে ব্রিটেন-স্থিত পাকিস্তানিদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে।

কাশ্মীর নিয়ে ফ্রান্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটা ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। আলোচনায় সমাধান সম্ভব। ফ্রান্সের বিদেশ দফতর পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেছে, ওই এলাকায় কোনও উত্তেজনা যাতে না ছড়ানো হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অনুরোধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশও বলেছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের সিদ্ধান্ত ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ পাকিস্তান। পাক বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জানান, কাশ্মীর প্রশ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

রাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই বলেন, ‘‘ভারতের উচিত কাশ্মীরে এমন নীতি নিয়ে চলা যাতে মুসলিমেরা হেনস্থার মুখে না পড়েন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement