—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ছেলেবেলার সেই সাজি ভরা পদ্মফুলের শোভা আর শিউলি ফুলের সুমধুর ঘ্রাণ লুক্সেমবার্গে পাওয়া মুশকিল। তবে এখানে মা দুর্গা যখন আসেন, প্রকৃতি তখন সোনায় মোড়া। গাছের সব পাতাই হলুদ। এ ভাবেই এখানকার প্রকৃতিতে বেজে ওঠে মায়ের আগমনী বার্তা।
আমাদের পুজো এ বার পঞ্চম বর্ষে পা দিল। করোনা অতিমারিকে অতিক্রম করে এ বার আমাদের মহাআয়োজন। সপ্তমীতে কলা বউ স্নান, অষ্টমীর খিচুড়ি ভোগ থেকে সন্ধি পুজো, নবমী নিশির বিদায় মুহূর্ত থেকে বিজয়ার সিঁদুর খেলা সব কিছুই এখানে সুন্দর ভাবে পালন করা হয়। দু’তিন মাস আগে থেকেই মণ্ডপসজ্জা, পুজোর প্রসাদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই সব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। এ বার পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে সাজানো হবে মণ্ডপ। চন্দ্রযান ৩-এর ছোঁয়া থাকবে প্রধান ফটক ও ফটো বুথে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় সংবাদপত্রের সৌজন্যে এই পুজোর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকেরা যেমন উৎসাহিত, তেমনি প্রতিবেশী দেশফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, এমনকি বেলজিয়াম থেকেও বহু প্রবাসী বাঙালি আসেন আমাদের পুজো দেখতে। পুজোয় বাঙালি খাবারই প্রাধান্য পায়। অষ্টমীতে খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি আর পায়েস থাকবেই। আমিষ ও নিরামিষ, দু’রকম খাবারেরই ব্যবস্থা থাকে। শুধু যে পুজো কমিটির সদস্যেরাই এই খাবার খেতে পারেন তা নয়। অনলাইন কুপনেরও ব্যবস্থা থাকে। বাইরে থেকে কোনও দর্শনার্থী এলে, তাঁরা আগে থেকে খাবারের জন্য বুকিং করে আসতে পারেন।
দেশের বাইরে থাকলে কী হবে, লুক্সেমবার্গের দুর্গাপুজোয় বাঙালিয়ানায় কোনও রকম আপস হয় না। আমাদের সন্তানেরা যেন মা দুর্গার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়, তারা যেন বাংলা ভাষা, গান, নাটক, বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য নানা আয়োজন করা হয়। পুজোর বিধি, পুজো কেন হয়, মা দুর্গা কে, মহালয়া কী— সব কিছু পুরোহিতমশাই খুব যত্ন করে বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই বাচ্চাদের বোঝান। ষষ্ঠী-সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী, আলাদা আলাদা দিনেরপুজোর কী কী বিশেষত্ব, তা এখন আমাদের সন্তানেরা জানে। বাঙালির হৃদয়ের একান্ত আপন এই সংস্কৃতিকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছেপৌঁছে দেওয়ার এক সুন্দর প্রয়াস লুক্সেমবার্গের এই পুজো। মাতৃবন্দনার আবহে এক টুকরো সোনার বাংলাকে খুঁজে পাওয়াযাবে এখানে।