(বাঁ দিকে) আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাংশে এখন স্থলপথে তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে রাশিয়ার সেনবাহিনী। গত তিন দিনের মধ্যে খারকিভ এলাকায় ১০টিরও বেশি গ্রাম নিজেদের দখলে নিয়েছে রুশ সেনা। এই পরিস্থিতিতে আজ আচমকা ইউক্রেন সফরে এলেন আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। জো বাইডেন প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানাচ্ছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনবাসীকে পাশে থাকার আশ্বাস দিতেই কিভে এসেছেন ব্লিঙ্কেন। এক দিকে যখন ব্লিঙ্কেন আজ কিভে পৌঁছেছেন, অন্য দিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায় একই সময়ে দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশ চিনে যাচ্ছেন বলে আজই জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম। রাশিয়া-ইউক্রেন তীব্র সংঘাতের সময়ে পুতিনের এই বেজিং সফরও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
ব্লিঙ্কেনের ইউক্রেন সফর নিয়ে আগাম কোনও খবর ছিল না। আজ ভোরে ট্রেনে চেপে কিভে পৌঁছন তিনি। পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী জ়েজ়ো শহর থেকে প্রায় ৯ ঘণ্টার ট্রেন সফর শেষে কিভে নামেন আমেরিকান বিদেশসচিব। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানবিক ত্রাণ ও সাহায্য পৌঁছনোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এই শহর। সম্ভবত সেই কারণেই এই শহর থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলেন ব্লিঙ্কেন।
গত মাসে ইউক্রেনকে অনুদান দেওয়ার জন্য বিশাল অঙ্কের বিল পাশ হয়েছিল আমেরিকান কংগ্রেসে। রিপাবলিকান সেনেটরদের প্রবল বাধা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকার পরে বিলটি আমেরিকান আইনসভার দুই কক্ষে পাশ হয়। সেই বিল পাশ হওয়ার পরে এই প্রথম বাইডেন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কোনও আধিকারিক ইউক্রেন সফরে এলেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ব্লিঙ্কেনের। তিনি কিভের মাটিতে পা রাখার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, আমেরিকা থেকে বিপুল অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম খারকিভের যুদ্ধক্ষেত্রে এসে পৌঁছেছে। আমেরিকান আইনসভায় অনুদান সংক্রান্ত বিলটি পাশ হতে এত দেরি হওয়াতেই কি ইউক্রেনে যুদ্ধাস্ত্র পৌঁছতে এত বেশি সময় লাগল? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি এড়িয়ে গিয়েছেন আমেরিকান এক সরকারি আধিকারিক। তবে তাঁর বক্তব্য, এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রুশ আগ্রাসন কতটা প্রতিহত করতে পারছে, সেটাই মূল বিষয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই কঠিন মুহূর্তে আরও এক বার ইউক্রেনের বিশেষ করে খারকিভের সাধারণ মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিতে ব্লিঙ্কেন এ দেশে এসেছেন।
এ দিকে, আজই জানা গিয়েছে যে আগামী পরশু অর্থাৎ বৃহস্পতিবার চিন সফরে যাচ্ছেন পুতিন। গত মার্চে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফেরার পরে এই প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন পুতিন। বেজিংয়ে তিনি অন্তত দু’দিন থাকবেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করার কথাও আছে তাঁর। গত ছ’মাসে এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য চিন সফরে যাচ্ছেন পুতিন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির জারি করা অজস্র নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া ঝুলছে রাশিয়ার উপরে। যাবতীয় আর্থিক এবং বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের জন্য তাই চিনের উপরে অনেকখানিই নির্ভরশীল রাশিয়া। এ দিকে আবার মস্কোর পাশে বরাবর দাঁড়ানোর জন্য আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশগুলির রোষের মুখে পড়েছে চিনও। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের এই বেজিং সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।