—ফাইল চিত্র
প্রতি এক মিনিটে তিন জন আমেরিকাবাসীর মৃত্যু! করোনা-অতিমারি কালে গত কাল ছিল আমেরিকার সব চেয়ে ভয়াবহ দিন। ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪৭০ জন। ফের রেকর্ড।
কোভিড-১৯-এ সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকা। দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যু তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তারা। গোটা বিশ্বে আক্রান্ত ৯ কোটি ২১ লক্ষ। এর মধ্যে শুধু আমেরিকাতেই করোনা-সংক্রমিত ২ কোটি ৩৩ লক্ষ মানুষ। ১৯ লক্ষ ৭২ হাজার মৃত্যুর মধ্যে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার প্রাণহানি প্রথম বিশ্বের এই দেশে। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে উপচে পড়ছে রোগীর ভিড়। ক্যালিফর্নিয়ার একটি ছোট শহর অ্যাপল ভ্যালির সেন্ট মেরি হাসপাতালের চিকিৎসক কারি ম্যাকগুয়ার বলেন, ‘‘আমার কর্মজীবনে এত অন্ধকার সময় দেখিনি। আমার চেনা-পরিচিত, কাছের অনেকের চিকিৎসা করেছি। দেখেছি কত প্রিয়জনের চলে যাওয়া।’’
বহু হাসপাতালেই হলগুলোতে আপৎকালীন শয্যা তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত আইসিইউ বেড প্রস্তুত হয়েছে। এমনকি শিশু বিভাগও উপচে যাচ্ছে রোগীর ভিড়ে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা সরকার গত কাল ঘোষণা করেছে, ২৬ জানুয়ারি থেকে কোভিড-নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া কাউকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
আরও খবর: আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন, কাল দ্বিতীয় বার ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হচ্ছেন ট্রাম্প
প্রতিবেশি দেশ কানাডা এ বিষয়ে আগে থেকেই কড়াকড়ি শুরু করেছে। কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ ওন্টারিয়ো। একে অর্থনীতির ‘ইঞ্জিন’ও বলা হয়। লকডাউন আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনবে জানা সত্ত্বেও বাসিন্দাদের ‘গৃহবন্দি’ করা হয়েছে। ওন্টারিয়োর প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থা।’’
আরও খবর: মাত্র ৫০% কার্যকরী চিনের করোনা টিকা! ট্রায়ালে বড় প্রশ্নের মুখে সাইনোভ্যাক
সর্বপ্রথম যে দেশে ধরা পড়েছিল করোনা-সংক্রমণ, সেই চিনে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। অন্তত সরকারি রিপোর্ট তাই বলছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী— মঙ্গলবার আমেরিকায় এক দিনে যা মৃত্যু হয়েছে, চিনের মোট মৃত্যু তাই। সংক্রমণ একেবারেই থেমে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তা আবার নতুন করে ছড়াচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন করে সংক্রমিতের মোট সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে ১০৭ জন স্থানীয় সংক্রমণের শিকার। বাকিরা বাইরে থেকে এসেছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তদন্তকারী দলের চিন সফরের মুখে নতুন সংক্রমণ চিন্তা বাড়িয়েছে শি চিনফিং সরকারের। তা ছাড়া চিনা ক্যালেন্ডারে সব চেয়ে বড় উৎসব আসতে চলেছে— বসন্ত উৎসব। সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে চিনা নববর্ষও পালন হয়। বাড়ি ফেরেন লক্ষ লক্ষ প্রবাসী। প্রশাসনের আশঙ্কা, এই উৎসবই না ‘সুপার-স্প্রেডার’ হয়।
ও দিকে, দেশজ প্রতিষেধক নিয়ে চিন আগে আশা প্রকাশ করলেও কাল তারা জানিয়েছে, ‘সিনোভ্যাক বায়োটেক’-এর টিকা ৫০.৪ শতাংশ কার্যকরী। সংস্থাটির দাবি, ব্রাজিলে যে হিউম্যান ট্রায়াল চালানো হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে এই টিকা উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম। কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সংক্রমিতের একটা বড় অংশ উপসর্গহীন। তাঁদের দেহে ভ্যাকসিন কাজ না-করলে ভাইরাস থেকেই যাবে। গত সপ্তাহে সিনোভ্যাকের গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, তাঁদের প্রতিষেধক সঙ্কটজনক কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশ কার্যকরী। সাত দিনে ফল বদলে যাওয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্নের মুখে চিনা সংস্থাটি।